সুনামগঞ্জে বৃষ্টি না হওয়ায় নদী ও হাওরে পানি আরও কমেছে

0
136
গ্রামের রাস্তায় এখনো পানি থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায়

সুনামগঞ্জে গতকাল বুধবার রাত ও আজ বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টি না হওয়ায় নদী ও হাওরে পানি আরও কমেছে। উজানের ঢলও নেমেছে কম। তাই জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ অন্য নদ-নদীর পানিও কমছে। তবে গ্রামের রাস্তায় পানি থাকায় ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের।

আজ সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটারে ছিল। গতকাল একই সময়ে সেখানে পানি ছিল ৭ দশমিক ৬৫ মিটার। দুই দিনে সুরমা নদীর পানি কমেছে ৩০ সেন্টিমিটার।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় এক সপ্তাহ ধরে পানি। চলাচল করতে বড় সমস্যা হচ্ছ। তবে পানি এখন কমছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হলেই সুনামগঞ্জে পানি বাড়ে। গত তিন দিন দুই জায়গাতেই বৃষ্টি হয়নি। বিশেষ করে মেঘালয়ে বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামেনি। তাই সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওরে পানি কমছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে মানুষের মনে।

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ জেলা সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকের মধ্যে গত বছরের মতো ভয়াবহ বন্যা হবে কি না, এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। তবে মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেনি। এখন পানি কমায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

আজ সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, ‘পানি অনেকটাই কমেছে। টানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যেভাবে পানি বাড়ছিল, তাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুধু আমি নই, সবার মনেই এই ভয় ছিল।’

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে সেটা হবে হালকা কিংবা মাঝারি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্ট ছাড়া অন্য সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে আছে। ছাতকে এখনো সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় জাদুকাটা, বৌলাই, নলজুর, কুশিয়ারা, কালনী, পাটলাই, চলতি, রক্তিসহ সব নদীর পানিই কমছে। একইভাবে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যেসব গ্রামীণ রাস্তা প্লাবিত হয়েছিল, সেসব রাস্তা থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। তবে যেসব রাস্তায় এখনো পানি আছে, সেসব এলাকায় মানুষ ভোগান্তিতে আছেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের নদী ও হাওরে এখন যে পানি আছে, সেটা এই এলাকার জন্য অনেকটা স্বাভাবিক বর্ষা। তবে টানা বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে বন্যার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এখন বৃষ্টি না হওয়ায় সে আশঙ্কা কেটে গেছে। সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও সেটি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও রয়েছে তাঁদের।

সুনামগঞ্জে গত বছর জুনে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। অতি বর্ষণের সঙ্গে ব্যাপকভাবে নেমেছিল উজানের ঢল। শহরে ঢলের পানি ঢোকে ১৬ জুন সকালে। সন্ধ্যা নামার আগেই পুরো শহর প্লাবিত হয়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে পুরো সুনামগঞ্জ। বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট–সেবা। ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত মাথায় নিয়ে হাজারো মানুষ ছোটেন আশ্রয়ের খোঁজে। উঁচু ভবন, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন মানুষ। শহরে চার থেকে ছয় ফুট পানি ছিল। সুনামগঞ্জ চার দিন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। সরকারি হিসাবে জেলার কমবেশি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মারা যায় ১৫ জন। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় ৫০ হাজার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.