জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও প্রাকৃতিক সুরক্ষায় অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্য। দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, জলবায়ু তহবিলে যুক্তরাজ্য যে ১১ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল, সেই জায়গা থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
এই খবরে যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন, ঋষি সুনাক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তুত করা এক ব্রিফিং নোট দ্য গার্ডিয়ানের হাতে এসেছে। সেই নোটে যুক্তরাজ্যের এই প্রতিশ্রুতি থেকে ফিরে আসার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল ২০১৯ সালে, সেই সময় আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ অর্থ খরচ করতাম এবং তখনো কোভিড-১৯ আসেনি।’ নোটে আরও বলা হয়েছে, এখন নতুন বাস্তবতা ও চাপের কারণে এই অঙ্গীকার পূরণ করা বড় চ্যালেঞ্জ; যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে দেওয়া অর্থও সহায়তা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত।
২০২৬ সালের মধ্যে জলবায়ু তহবিলে ১ হাজার ১৬০ কোটি পাউন্ড দিতে হলে দেশটি যে পরিমাণ অর্থ অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স বা ওডিএ হিসেবে দিয়ে থাকে, তার ৮৩ শতাংশ সেই খাতে ব্যয় করতে হবে। যুক্তরাজ্যের আমলারা নোটে লিখেছেন, জলবায়ু তহবিলে এত পরিমাণ অর্থ দিতে হলে মানবিক, নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য দেওয়া সহায়তাসহ অন্যান্য খাতে সহায়তা কাটছাঁট করতে হবে।
ওই নোটে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া ও ঋণ মওকুফের জন্য এই লক্ষ্য পূরণ করা আরও কঠিন হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু তহবিলে দ্বিগুণ অর্থ দেওয়ার ঘোষণার পর যুক্তরাজ্য সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ মোট জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য খাতেও বাজেট বরাদ্দ কমানো হয়েছে এবং জলবায়ু তহবিলের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ অব্যবহৃত থাকার কারণে ২০২৬ সালের মধ্যে বড় অংশ ব্যয় করার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ হঠাৎ চাপ বেড়ে গেছে।
যুক্তরাজ্য সরকার ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জলবায়ু তহবিলে ৫৮০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত এই ব্যয় স্রেফ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি পূরণে এই সময়ে যুক্তরাজ্য সরকারকে ১১ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৬০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করতে হবে। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কপ-১৫-তে যুক্তরাজ্য সরকার যে অঙ্গীকার করেছে, তার জন্য ৩০০ কোটি পাউন্ড পৃথক করে রাখা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কনিষ্ঠ মন্ত্রী জ্যাক গোল্ডস্মিথ গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, জলবায়ু বিষয়ে ঋষি সুনাকের অনীহা বা উদাসীনতা আছে। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
এদিকে যেসব দেশের জলবায়ু তহবিলের অর্থ পাওয়ার কথা, তহবিলের আকার কমে যাওয়ার সম্ভাবনায় তারা হতাশা প্রকাশ করেছে। মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের পরিবেশমন্ত্রী লি হোয়াইট বলেন, জলবায়ু–সংকট এমন এক বিষয়, যার সমাধান খুঁজে পেতে সব দেশের অংশগ্রহণ থাকা উচিত।
পরিবেশমন্ত্রী লি হোয়াইট আরও বলেন, ‘গ্যাবনের ৮৮ শতাংশই উষ্ণমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্টে আচ্ছাদিত। আমরা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বার্ষিক বৃক্ষশূন্যতার হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশের নিচে রেখেছি। আমরা বছরে ১০ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করি। খুব কম দেশই এর চেয়ে বেশি করছে। উন্নত দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের মতো দেশের আরও বড় দায় নেওয়া উচিত। কারণ, শিল্পবিপ্লব সে দেশেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রায়ই তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়, নেতৃত্বও দিতে পারে না, আবার যে সামান্য অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার করে, সেটাও রাখতে পারে না।’