মার্কিন স্টক মার্কেটের চাঙা ভাব কী কারণে

0
164

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেটের পরিস্থিতি দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথম ছয় মাসে বাজারে রীতিমতো ধস নামে। জুন শেষে শেয়ারের দর প্রায় ২০ শতাংশ পড়ে যায়। এরপর শেয়ারবাজার কিছুটা ওঠানামা করে, আগস্টে এসে সূচক আপেক্ষিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়। তখন ধারণা করা হয়েছিল, উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা শেষ হয়েছে, কিন্তু অক্টোবরে যখন মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে গেল, তখন বাজার নতুন করে ধসে পড়ে। ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি আবার জুনের পর্যায়ে ফেরত যায়। খবর দ্য ইকোনমিস্টের।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত গত বছরের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব হলো স্টক মার্কেটের মূল সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ বেড়েছে ১৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, সেই সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই করপোরেট মুনাফায় কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা ও উত্তেজনা শুরু হয়েছে। ফলে গত বছরের অক্টোবরের পর সূচক এখন ২০ শতাংশ ওপরে।

এদিকে রয়টার্সের এক সংবাদের তথ্যানুযায়ী, ওয়াল স্ট্রিটের বেশ কিছু বড় কোম্পানির শেয়ারদর এ বছর বেড়েছে। এর মধ্যে অ্যাপলের শেয়ারদর বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মোট চারটি কোম্পানির বাজার মূলধন এখন এক লাখ কোটি ডলারের ওপরে উঠেছে। সেগুলো হলো অ্যাপল, অ্যামাজন, এনভিডিয়া ও মাইক্রোসফট। অ্যাপলের বাজার মূলধন তিন লাখ কোটি ডলারে উঠেছে। এরপর আছে মাইক্রোসফট, তাদের বাজার মূলধন আড়াই লাখ কোটি ডলার।

অ্যাপল ছাড়া চলতি বছর টেসলা ও মেটার শেয়ারদর দ্বিগুণ হয়েছে। এনভিডিয়ার শেয়ারদর ১৯০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, ফলে তারাও ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাবে ঢুকে গেছে।

বিনিয়োগকারীরা হয়তো ভাবছেন, ২০২২ সালের বিশৃঙ্খলা পেছনে ফেলে আসা গেছে এবং ২০২১ সালের চাঙাভাব ফেরত আসার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সেবার মূলত প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্টক মার্কেটে চাঙাভাব তৈরি হয়।

দ্য ইকোনমিস্ট–এর সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের চাঙাভাবের ভিত ছিল দুর্বল। বাজার গবেষণাকারী সংস্থাগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টক অতি মূল্যায়িত। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়, অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারের দাম বেশি থাকে, কিন্তু সেটা মূলত স্টকের অতি মূল্যায়নের কারণে হয়। গত তিন দশকে মার্কিন স্টক যে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রিমিয়াম অর্জন করেছে, তা ঠিক কোম্পানিগুলোর মৌল ভিত্তির কারণে ঘটেনি। এই ৪ দশমিক ৬ শতাংশের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এসেছে প্রাইস-টু-আর্নিং রেশিওর কারণে, অর্থাৎ একটি কোম্পানি যত আয় করছে, তার জন্য বিনিয়োগকারীরা কত দিতে রাজি আছেন তার ওপর। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর এই প্রিমিয়াম এসেছে তাদের আয়ের চেয়ে বেশি হারে বিনিয়োগকারীদের মূল্য দেওয়ার প্রবণতা বা ইচ্ছার কারণে।

অন্যদিকে এই প্রিমিয়াম আয়ের ১ দশমিক ২ শতাংশ এসেছে কোম্পানির আয় বৃদ্ধি বা শক্তিশালী মৌল ভিত্তির কারণে। অর্থাৎ এই প্রিমিয়াম অর্জনের পেছনে কোম্পানির মৌল ভিত্তির প্রভাব ছিল কম।

এই পরিস্থিতিতে দ্য ইকোনমিস্ট ধারণা করছে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগ ২০২২ সালের দ্বিতীয় ভাগের প্রতিফলন ঘটাবে। অর্থাৎ বাজারে একধরনের অস্বস্তিকর ওঠানামা দেখা যাবে বা বাস্তবতা তার চেয়েও খারাপ হতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও খাদ্য ও জ্বালানি ব্যতীত অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার অতটা কমেনি। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, নীতি সুদহার আরও একটু বাড়ানো হলে যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার আরও কিছুটা কমবে। অন্যদিকে এআই নিয়ে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা অনেকটাই ভবিষ্যৎমুখী। এর প্রভাব কী দেখতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এআই বিপ্লব ঘটতে হবে। ফলে বছরের দ্বিতীয় ভাগ নিস্তরঙ্গ থাকবে, এমন আশা দুরাশাই মনে করছে দ্য ইকোনমিস্ট।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.