১১ ঘণ্টার সফরে বাংলাদেশে পা রেখেছেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। সোমবার ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন তিনি। কলকাতার ক্রীড়া সংগঠক শতদ্রু দত্তের আমন্ত্রণে ভারত সফরে আসার কথা থাকলেও মার্টিনেজ বাংলাদেশ সফরেও আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারই প্রেক্ষিতে ঢাকায় এলেন কাতার বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক।
নেদারল্যান্ডস থেকে ঢাকায় পা রাখার পর কিছুক্ষণ হোটেলে বিশ্রাম নেন মার্টিনেজ। বিশ্রাম শেষে তিনি আসলেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেঞ্চার কার্যালয়ে। সেখানে মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে দেখা হলো বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষকের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক এ অধিনায়ক ছাড়াও নেক্সট ভেঞ্চারের অনুষ্ঠানে মার্টিনেজের সঙ্গে আড্ডায় ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
মার্টিনেজের সঙ্গে দেখা করে তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ মাশরাফি। টাইগার সাবেক এই অধিনায়ক মার্টিনেজের সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন। এ সময় তার ছেলে ও মেয়েকে অটোগ্রাফ ও তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন মার্টিনেজ। তবে মার্টিনেজের সঙ্গে কি আলোচনা হলো এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে কিছু বলেননি মাশরাফি।
এরপর মার্টিনেজের সঙ্গে দেখা করার অভিজ্ঞতা ফেসবুকে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করেন মাশরাফি। সাবেক এই অধিনায়ক লিখেন, ‘এমিকে ভালো লাগার শুরু কোপা আমেরিকা থেকেই, যেখানে সে টাইব্রেকারে দুটি গোল আটকে দিয়ে দলকে জয় এনে দিল। কত বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা! লিওনেল মেসিও পেল দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফির স্বাদ। স্বাভাবিকভাবেই পাখির চোখে তাকিয়ে ছিলাম বিশ্বকাপের দিকে। কিন্তু সৌদি আরবের সাথে হেরে মনে হয়েছিল, আরেকটি বিশ্বকাপও হয়তো শেষ হবে হতাশায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো এবং পরে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা ছিল অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের মতো।’
তিনি লিখেন, ‘সেই জয়ের অন্যতম নায়ক এমির সঙ্গে দেখা হলো আমাদের এই ঢাকায়। খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা, কিন্তু দারুণ এক অনুভূতি। বিশ্বকাপ জয়ী দলের গোলকিপার চোখের সামনে! সে তো জানে না, আমার এবং আমার মতো আরও কত কোটি মানুষের কত বছরের অপেক্ষা শেষ হলো, যেদিন তার ঐ হাত ধরেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করল! আজকে সে ইন্টারভিউয়ের মাঝেই একবার ট্রাউজার উঠিয়ে দেখাল, পায়ের ঠিক সেই জায়গায় একটি ট্যাটু করিয়েছে, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বাঁশির ১৮ সেকেন্ড আগে কোলো মুয়ানির শটটি আটকিয়ে দিয়েছিল যে জায়গা দিয়ে। এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো, আসলে বিশ্বকাপটাতো ওখানেই জিতে নিয়েছে।’
মাশরাফি আরও লিখেন, ‘আজকে আসলে বেশি ভালো লাগছে আমার সন্তানদের জন্য। যখন বললাম, ‘এমি আসছে, তোমাদের কি দেখা করার ইচ্ছা আছে?’ ওরা লাফাচ্ছিল। সবশেষ দুটি দিন ওরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না এমিকে দেখবে বলে। আজকে এমির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বললাম, ‘বাচ্চারা তোমার অটোগ্রাফ নিতে চায়।’ সে এত আন্তরিকতা দেখাল, এক কথায় অসাধারণ। এমনকি সে ছবিও তুলে দিল ওদের সঙ্গে। এখন তারা মহাখুশি, আর ওদের খুশিতে আমিও এখন মহাখুশি।
এমি, আপনাকে স্বাগত এই বাংলার মাটিতে। এখানে আপনাদের অগুনতি ভক্ত আছে, যুগ যুগ ধরে। আশা করি, আপনারও ভালো লাগছে এই মাটিতে পা রেখে।
পাশাপাশি এটাও ভাবি, সত্যি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করবে আর আমরা আমাদের পতাকা নিয়ে মিছিল করব, ইনশাল্লাহ। অনেকের কাছে এখন এটা অবাস্তব মনে হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, কাজটা কঠিন, খুব কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। স্বপ্ন পূরণের সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি, ইনশাল্লাহ।’
এদিকে মধ্যাহ্নভোজ শেষে দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মার্টিনেজ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে কলকাতাগামী বিমানে উঠবেন তিনি।