নেত্রকোনায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

0
148
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উব্দাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলা সদরের ডুবিয়ারকোনা এলাকায়

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ রোববার বেলা দেড়টার দিকে ওই নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া জেলার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, সদর ও বারহাট্টা উপজেলার কংস, খালিয়াজুরির ধনুসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে নেত্রকোনাসহ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ওই সময়ে, অর্থাৎ গত ৪৮ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এতে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার পর থেকে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এ ছাড়া ওই উপজেলার মহাদেও নদ, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি এসেছে।

খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল হক জানান, বাউসাম-চানপুর সড়কের বাউসাম বাজার এলাকার কিছু অংশ পানিতে ভেঙে গেছে। লোকজনদের ঝুঁকি নিয়ে ওই ভাঙা অংশ হেঁটে পার হতে হচ্ছে।

পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক আজ রোববার বেলা পৌনে দুইটার দিকে বলেন, আজ সকাল থেকে পানি বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনিয়নের কালাইকোনা, জীবনপুর, গুয়াতলা, কৈলাটি, মঙ্গলসিধসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকছে। এতে ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ধীতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উব্দাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে উপজেলার বেশ কিছু এলাকা  প্লাবিত হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলা সদরের ডুবিয়ারকোনা এলাকায়
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উব্দাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলা সদরের ডুবিয়ারকোনা এলাকায়

কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন জানান, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় কতগুলো বিদ্যালয়ে বন্যার পানি এসেছে, তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে তথ্য পেয়েছি, খলা ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুবিয়ারকোনা, বাহাদুরকান্দা, বাসাউড়াসহ ১২টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে।’

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পাউবোর নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে সুরমা, জাদুকাটা, সারি গোয়াইন, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.