রাজধানীর হাজারীবাগ পশুর হাটে ২৬টি গরু নিয়ে এসেছেন কুষ্টিয়ার পাইকার সজল আহমেদ। চার দিন আগে (শুক্রবার) হাটে এলেও গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত তাঁর মাত্র তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে দুটি গরুই আকারে ছোট, ওজনে প্রায় তিন মণ। আরেকটি প্রায় সাড়ে ৪ মণ ওজনের ছিল।
সজলের গরুগুলোর ওজন আড়াই থেকে ১০ মণের মধ্যে। ছোট দুটি গরুর একটি ৯০ হাজার ও অন্যটি ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। মাঝারি আকারের গরুটি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। সজল বলেন, ‘৮-১০ মণ ওজনের মোটামুটি বড় আকারের যে গরুগুলো এনেছি, তাতে ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ দেখছি না। আশা করি, চাঁনরাতের মধ্যে বিক্রি করতে পারব।’
গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪টি হাট—গাবতলী, বছিলা ৪০ ফুট সড়ক, হাজারীবাগ ও আফতাবনগর সরেজমিন ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। ওই হাটগুলোতে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু (গরু-ছাগল) দেখা গেছে। তবে ক্রেতাদের উপস্থিতি তেমন নেই। ক্রেতা কম থাকায় ব্যবসায়ী ও পাইকারদের শুয়ে-বসে থাকতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাট থেকে যেসব ক্রেতা গরু কিনে ফিরছিলেন, বেশির ভাগ গরুই আকারে ছোট। দাম ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। যা গতবারের তুলনায় যথেষ্ট বেশি বলে জানান ক্রেতারা।
গাবতলী পশুর হাটের প্রধান ফটকে বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণ করে ক্রেতাদের ছোট আকারের ৩৭টি গরু নিয়ে ঘরে ফিরতে দেখা গেল। একই সময়ে মাঝারি আকারের গরু নিয়ে ফেরেন ৯ জন ক্রেতা। বড় কোনো গরু কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়নি বললেই চলে।
ওই হাট থেকে ছোট আকারের দুটি গরু ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় কেনেন মিরপুরের বাসিন্দা আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিক্রেতারা গত বছরের তুলনায় প্রতিটি গরুতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি চাইছেন। তাঁর কেনা দুটি গরুতে গত বছরের তুলনায় ১৫ হাজার টাকা বেশি লেগেছে।
মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফুট সড়ক হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট আকারের গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। সেখানে নেত্রকোনার পূর্বধলা থেকে ১৮টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী রুবেল বিশ্বাস। গতকাল দুপুর পর্যন্ত তিনি দুটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। একটি ১ লাখ ৬ হাজারে, অন্যটি ১ লাখ ১০ হাজারে।
রুবেল বিশ্বাস বলেন, একটা গরুতে চার-পাঁচ হাজার টাকা লাভ এলে বেঁচে দিচ্ছি। সব খরচ বাদে দুইটা গরুতে ৮-১০ হাজার টাকা লাভ থাকতে পারে।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে বছিলা হাট থেকে তিনজন ক্রেতাকে গরু কিনে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে। প্রথমজন বছিলারই বাসিন্দা হাফিজ খান। তাঁর কেনা গরুটির দাম ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। তাঁর ভাষ্য, অনেক বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। দাম কমাতেই চায় না। তাই সময় নিয়ে দরদাম করতে হবে।
বাকি দুটি গরুর একটি কিনেছেন ধানমন্ডির সংকরের বাসিন্দা শাহজাহান আলী, এক লাখ টাকায়। আরেকটি কিনেছেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. আকরামুজ্জামান। ওই গরুটির দাম ৭৭ হাজার টাকা।
বছিলা হাটের ইজারাদার এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, হাটে কমবেশি সব আকারের গরুই আছে। তবে ছোট ও মাঝারি গরুর সংখ্যাই বেশি। ওই গরুগুলোই বিক্রিও হচ্ছে বেশি। হাটটিতে ১০ হাজার গরুর রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
বিকেলে রাজধানীর আফতাব নগর হাটে গিয়েও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু থাকলেও ক্রেতা তেমন নেই। ফলে বিক্রিও তেমন জমেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
কেনা দামও বলে না
ওই চার হাটে ছাগল নিয়ে আসা পাইকারদের অভিযোগ, এ বছর ছাগল তুলনামূলক বেশি দামে কেনা পড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা দরদামের ক্ষেত্রে কেনা দামও বলছেন না। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ছাগল কিনতে হয়েছে প্রতি কেজি এক হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি দামে।
রাজবাড়ী থেকে ২১টি ছাগল নিয়ে বছিলা হাটে এসেছেন পাইকার জামাল মোল্লা। গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁর একটি ছাগলও বিক্রি হয়নি। ক্রেতাদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আওড়া (অযৌক্তিক) দাম বইলাই হাঁটা লয়। যা দিয়া কিনা হইছে, তার আদাআদিও (অর্ধেক) দাম কয় না। কিনা দামের থাইকাও ছয়-সাত হাজার টাকা কম কয়।’
আফতাবনগর হাটে বগুড়ার জহুর আলী ১৮টি ছাগল এনেছেন। গতকাল পর্যন্ত তিনি মাত্র একটি বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি জানান, প্রায় ২২ কেজি ওজনের ছাগলটি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। কোনো লাভ হয়নি।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে গতকাল রাজধানীর পশুর ২০টি হাটে মোট ৪৫ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ২০ হাজারটি এবং ছাগল ও ভেড়া ২৫ হাজারটি।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে মোট কোরবানির ২৫ লাখ পশু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে অনলাইনে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, সারা দেশের হিসাবে এখন পর্যন্ত যত প্রাণী বিক্রি হয়েছে, তা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশি। আগামীকাল আরও বেশি বিক্রি হবে বলেও আশা করছেন তাঁরা।