চীনের ‘গুপ্তচর’ বেলুন প্রকল্পের বিষয়ে নতুন প্রমাণ উদ্ঘাটনের দাবি করেছে বিবিসির বিশেষ অনুষ্ঠান ‘প্যানোরামা’। এতে বলা হচ্ছে, জাপান ও তাইওয়ানের ওপর দিয়েও এই বেলুন উড়িয়েছে চীন।
জাপানের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে এমন বেলুন ওড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে টোকিও। জাপানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এই বেলুন ভূপাতিত করার জন্য তারা প্রস্তুত।
বিবিসির উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণের বিষয়ে চীন সরাসরি কিছু বলেনি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা ‘গুপ্তচর’ বেলুন শনাক্ত হয়। পরে এই বেলুন ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র।
‘গুপ্তচর’ বেলুন-কাণ্ডের জেরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে নতুন করে তিক্ততা দেখা দেয়।
চীনের পক্ষ থেকে তখন দাবি করা করা হয়েছিল, জানুয়ারির শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে শনাক্ত বেলুনটি ছিল বেসামরিক আকাশযান। এই বেলুন আবহাওয়ার মতো বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে বেলুন চলে যাওয়ার বিষয়টি ছিল অনিচ্ছাকৃত ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক বিশ্লেষক জন কালভার ‘প্যানোরামা’কে বলেন, এশিয়ার আকাশে চীনের বেলুন ওড়ানোর ব্যাপারটি শুধু একবারের ঘটনা নয়। অন্তত পাঁচ বছর আগে থেকে এ কাজ অব্যাহতভাবে করা হচ্ছে।
জন কালভার বলেন, দূরের মিশনের জন্য এই চীনা বেলুনগুলো বিশেষভাবে তৈরি। কিছু বেলুন ইতিমধ্যে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করেছে বলে মনে হয়।
চীনের ‘গুপ্তচর’ বেলুন প্রকল্পের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি সিনথেটিকের সঙ্গে বিবিসি কাজ করেছে। কোম্পানিটি কৃত্রিম উপগ্রহের ধারণ করা বিপুল পরিমাণ ডেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এই প্রক্রিয়ায় পূর্ব-এশিয়া অতিক্রম করা বেলুনের একাধিক চিত্র খুঁজে পেয়েছে বিবিসি
কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কোরি জাস্কোলস্কির ভাষ্য, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে একটি বেলুনের জাপানের উত্তরাঞ্চল অতিক্রম করার প্রমাণ পেয়েছেন তিনি। এ-সংক্রান্ত ছবি আগে প্রকাশ করা হয়নি।
জাস্কোলস্কির ভাষ্যমতে, তথ্য-প্রমাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, বেলুনটি চীনের খুব ভেতর থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপান। অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে জাপানে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি বেশি।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবিসিকে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকার সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে। জাপানের ভূখণ্ডে দেশটির জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় এই বেলুন ভূপাতিত করতেও তারা প্রস্তুত।
চীন আরও বেলুন উৎক্ষেপণ করেছিল কি না, তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিবিসির প্যানোরামা দল তাইওয়ানের আবহাওয়া দপ্তরের তোলা দুটি ছবি খুঁজে পায়। এতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের আকাশে একটি বেলুন দেখা যায়।
তাইওয়ানের আবহাওয়া দপ্তরের তোলা ছবির সঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহের ধারণ করা ছবি মিলিয়ে দেখেন সিনথেটিকের প্রতিষ্ঠাতা জাস্কোলস্কি। তিনি বলেন, তাঁরা তাইওয়ানের উপকূলে বেলুনটি দেখতে পেয়েছেন।
তাইওয়ান সরকার ‘প্যানোরামা’কে বলেছে, তারা মনে করে, এটি ছিল আবহাওয়া-সংশ্লিষ্ট কোনো বেলুন। তবে তাইওয়ান সরকারের এই ধারণার সঙ্গে একমত নন জাস্কোলস্কি।
‘গুপ্তচর’ বেলুন প্রকল্পের বিষয়ে লন্ডনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, চীনকে হেয় ও আক্রমণ করার ভিত্তিহীন অভিযোগ তারা প্রত্যাখ্যান করছে। চীন একটি দায়িত্বশীল দেশ। তারা সব সময় আন্তর্জাতিক আইন কঠোরভাবে মেনে কাজ করে। তারা সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে।