আমরা জানি, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যা স্ত্রী এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে এ জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। তবে এবার একটু আগেই, মানে এপ্রিল-মে থেকেই এই জ্বরের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। তাই এখনই অভিভাবকদের সাবধান হওয়া জরুরি।
ডেঙ্গু রোগের মূল লক্ষণ জ্বর। প্রথম দুই থেকে তিন দিন এই জ্বর থাকে, এবং তা ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে গাব্যথা, চোখের পেছন দিকে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, পেটব্যথা, বমি ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সেই সঙ্গে অনেক শিশুর গায়ে দানা বা র্যাশ দেখা দেয়। নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। ডেঙ্গুর তিন থেকে আট দিনের সময়কে বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল ফেজ’। এই সময় মূলত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুর অবস্থা জটিল হয়। এ ক্ষেত্রে পেটে পানি এসে পেট ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বমি বা মলের সঙ্গে রক্ত, খিঁচুনি, হাত–পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। এসব লক্ষণ হলো ডেঙ্গুর বিপদচিহ্ন। এগুলো দেখা দিলে সাবধান হতে হবে।
বর্তমানে এই মৌসুমে জ্বর হলেই প্রথমে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। জ্বরের প্রথম দিনে এ পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। জ্বর হলে বাচ্চাকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত পানি, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি পান করাতে হবে, যেন অন্তত ৬ বার করে প্রস্রাব করে। জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ব্যথার ওষুধ দেওয়া যাবে না। কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গুর বিপদচিহ্নগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিপদচিহ্ন দেখলে শিশুকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ, এ সময় শিশুর শিরাপথে স্যালাইন লাগতে পারে।
আমাদের দেশে একটি ধারণা আছে যে ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট দিলেই চিকিৎসা পরিপূর্ণ হয়। ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। সময়মতো শিরাপথে স্যালাইন দিলে, বিশ্রাম নিলে এবং তরল পান করলেই সাধারণত ভালো হয়ে যায়।
প্রতিরোধ
ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ করতে আমাদের বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুলের টব, ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি, বাথরুমের বালতির পানি তিন দিন পরপর অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে, যেন ডেঙ্গু মশা এই পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়তে না পারে। ভোররাত ও সন্ধ্যার দিকে মশারি টাঙাতে হবে। ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই মশারির নিচে রাখতে হবে। সুতরাং আসুন সাবধান থাকি, শিশুকে সুস্থ রাখি।