এ বছর ডেঙ্গুর ধরন (ভেরিয়েন্ট) ডেন-২-এ বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সীমিতসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রোগী ডেঙ্গুর ধরন ডেন-২-এ আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ৩৮ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন অন্য ধরন ডেন-৩-এ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুর ধরন সম্পর্কে এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও ভর্তি হওয়া রোগীর মৃত্যু বেড়েই চলেছে। শুক্রবার সকাল আটটা থেকে গতকাল শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৭৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন চারজন। এই নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৩।
ডেঙ্গুর মৌসুম না হলেও বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। রোগতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর চারটি ধরন: ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। ডেঙ্গুর একটি ধরনে আক্রান্ত হলে সেই নির্দিষ্ট ধরনের প্রতিরোধক্ষমতা শরীরে গড়ে ওঠে, পরবর্তী সময়ে সেই ধরনটিতে মানুষ আর আক্রান্ত হয় না। তবে অন্য ধরনে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এভাবে মোট চারবার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতা ও জটিলতা দুটিই বাড়ে।
গতকাল আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, আইইডিসিআর ঢাকার একাধিক হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছে। গত সপ্তাহে এসব নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ৬২ শতাংশ নমুনায় ডেন-২ শনাক্ত হয়েছে। আর ৩৮ শতাংশ নমুনায় ডেন-৩ শনাক্ত হয়েছে।
তাহমিনা বলেন, ২০২২ সালে নমুনা বিশ্লেষণে প্রাধান্য ছিল ডেন-৩-এর। ৯০ শতাংশ রোগী আক্রান্ত হয়েছিল ডেন-৩-এ। বাকি প্রায় ১০ শতাংশ ছিল ডেন-৪।
দেশে ডেঙ্গুর বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০০০ সালে। তবে ডেঙ্গুর ধরন বিশ্লেষণ শুরু হয় ২০১৩ সালে। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডেন-১ ও ডেন-২ বেশি ছিল। প্রায় সাত বছর পর ডেন-২ বেশি দেখা যাচ্ছে।
দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখের বেশি মানুষ। তখন ৯০ শতাংশ মানুষ ডেন-৩-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ঢাকা শহরে বা দেশের অন্য জেলাগুলোতে কত মানুষ একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বা হচ্ছেন, তার তথ্য সঠিকভাবে কারও জানা নেই। অন্যদিকে কোনো রোগীর পক্ষেও জানা সম্ভব হয় না যে অতীতে তিনি কোন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে রোগতত্ত্ববিদেরা বলেন, এক বছর একটি ধরনের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে এবং তারপর অন্য একটি ধরনের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিলে রোগের জটিলতা বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তবে এ বছর তেমন ঝুঁকি আছে কি না তার সরাসরি কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, এবার যদি ডেন-২-এর পরিমাণ বেশি থাকে এবং মানুষ যদি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হন, তাহলে রোগের জটিলতা বেশি হওয়ার ঝুঁকি আছে।
গত সপ্তাহে সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছিলেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ডেঙ্গুর ‘শক সিনড্রোম’ বেশি দেখা যাচ্ছে।
শক সিনড্রোমের অর্থ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রক্তের অণুচক্রিকা দ্রুত কমে যায়। রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গড়ে, রোগী অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যায়।
এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৩২ জন। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ ঢাকা শহরের এবং বাকি ২৩ শতাংশ ঢাকা শহরের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলের।