মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে গোলাগুলি, মারপিট

0
190
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষের সময় গাড়ি ভাঙচুর হয়, ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আজ বুধবার ছিল পঞ্চম দিন। গত চার দিনের মতো আজও মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক অশান্তি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস, বামদল ও আইএসএফ বা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সমর্থকদের সঙ্গে। বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের সমর্থকেরা বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিলে এসব সংঘর্ষ হয়।

সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙরে। এখানে সকাল থেকে তৃণমূল কর্মীরা এখানকার আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির আইএসএফ দলকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে তীব্র বাধা সৃষ্টি করেন তৃণমূলের সমর্থকেরা। ফলে এ ঘটনার পর অশান্ত হয়ে ওঠে ভাঙর। শুরু হয় বোমাবাজি আর গোলাগুলির লড়াই। চলে মুহুর্মুহু বোমা। এই সংঘর্ষ থামাতে নামানো হয় র‌্যাফ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। লাঠিচার্জ হয় ব্যাপক।

অন্যদিকে এ ঘটনা চলার সময়-সময় আইএসএফ নেতা ও স্থানীয় বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে। কিন্তু মমতা নওশাদ সিদ্দিকিকে সাক্ষাৎ করার সময় না দিলে তিনি ফিরে আসেন।

নওশাদ সিদ্দিকি পরে বলেন, ভাঙরের অবস্থা জানাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সময় দিতে পারেননি। আজ এই ভাঙরে ৫টি গাড়ি ভাঙচুর হয়। তৃণমূল দাবি করেছে এই গাড়িগুলো ভেঙেছেন আইএসএফের সমর্থকেরা।

নিরপেক্ষ নির্বাচন করার দাবিতে আজ বিকেলে রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার সঙ্গে দেখা করেছেন। আজ যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তাঁরা যেন কাল তা দিতে পারেন, সেই অনুরোধ করতেই শুভেন্দু যান রাজীব সিনহার কাছে।

ভাঙরের সংঘর্ষ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা
ভাঙরের সংঘর্ষ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা, ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এদিকে আজ ভাঙরে হামলা চালানো হয় সাংবাদিকদের ওপরও। এবিপি আনন্দসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ওপর চড়াও হন তৃণমূলের সমর্থকেরা।

রাজ্যের বাঁকুরার ইন্দাসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া মালদহ, বসিরহাট, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, রানীনগর, চোপড়া, বর্ধমান, এগড়া, আহমেদপুর, মুরারইসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয় শাসক দল তৃণমূল।

আজ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিংয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে এসডিপিওসহ ৫ পুলিশ আহত হয়। পুলিশ গ্রেপ্তার করে ১৭ জনকে। আরও গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা অর্ণব রায়কে। এই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন দুই তৃণমূল কর্মী।

২০১৮ সালের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনও হয়েছিল এক দফায়, ১৪ মে। ওই নির্বাচনের আগেই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল ৩৪ শতাংশ আসন। নির্বাচন হয়েছিল ৬৬ শতাংশ আসনে। গত নির্বাচনে নির্বাচনী সংঘর্ষে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল এই রাজ্যে। এবার এখন পর্যন্ত মারা গেছেন একজন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.