এলোমেলোভাবে চলছে শিক্ষার কাজকর্ম

0
184
শিক্ষা

শিক্ষার বেশির ভাগ কাজই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ওপর।

বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া শিক্ষাক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে সরকারের অন্যতম সাফল্য বলা যায়। ২০১০ সাল থেকে এই কাজ সরকার অনেকটা রেওয়াজে পরিণত করেছিল। কিন্তু তিন বছর ধরে তাতে ছেদ পড়েছে। ২০২১ সালে করোনার বড় প্রভাব থাকলেও গত দুই বছর শুরুতে সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পায়নি। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার পরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী সব বই পায়নি। বইয়ের মানও ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় খারাপ।

চলতি বছর আবার নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি পাঠ্যবই নিয়ে গোলমেলে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে শিক্ষা বিভাগ। প্রথমে দুটি বই প্রত্যাহার, পরে আবার শিক্ষাবর্ষের প্রায় চার মাস পর বই সংশোধন করা হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন নিয়েও অস্পষ্টতা কাটাতে পারেনি তারা। আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ের মান নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, আগের তুলনায় কম উজ্জ্বলতার (৮০ ব্রাইটনেস) কাগজে বই ছাপানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শুধু পাঠ্যবই ও নতুন শিক্ষাক্রম নয়, শিক্ষার নানা কাজেও এলোমেলো অবস্থা। এতে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আর এসবের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের ওপর।

দেশে বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী প্রায় ২ কোটি ৯০ হাজার, মাধ্যমিকে ১ কোটি ও কলেজে ৪৩ লাখের বেশি। বাকিরা শিক্ষার অন্যান্য স্তরে পড়েন।

প্রকল্প নিয়ে লেজেগোবরে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ১০টি প্রকল্প পরিচালনা করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব প্রকল্পের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল প্রায় ২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয়েছে ৬১৫ কোটি (প্রায় ২৮ শতাংশ) টাকা। তবে ব্যয় হয়েছে আরও কম—প্রায় ৪৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তখন পর্যন্ত এসব প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সময়ে অগ্রগতির হার ছিল ২৮ শতাংশ। দু-একটি বাদে মাউশির সব প্রকল্পই চলছে ধীরগতিতে। বারবার প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানোয় বাড়ছে ব্যয়।

এই ১০ প্রকল্পের কোনো কোনোটির অবস্থা একেবারে লেজেগোবরে। যেমন মাউশি ২০১৬ সালে ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রচলন, (পর্যায়-২)’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ করার কথা। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। তবে ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিপির পর্যালোচনা সভার তথ্য বলছে, এত বছর পরও এই প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কোনো অগ্রগতি নেই।

জানা গেছে, এই প্রকল্পের অধীন দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শ্রেণিকক্ষ মাল্টিমিডিয়া হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগে একবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। এটি একটি ব্যর্থ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানলেও দৃশ্যমান কোনো সমাধান নেই।

রাজধানীর আশপাশে ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের অবস্থাও ভালো নয়। ২০১৭ সালে নেওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭৩ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্রগতির হার শূন্য। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে গলদঘর্ম

গত জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। এতে পড়ানোর ধরন, মূল্যায়ন ও পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমকে ভালো বলছেন শিক্ষাবিদদের অনেকে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শুরুতেই এলোমেলো অবস্থার সৃষ্টি করেছে শিক্ষা বিভাগ।

প্রথমেই পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্কের মুখে শিক্ষাবর্ষ শুরুর ১ মাস ১০ দিন পর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটি প্রত্যাহার করে এনসিটিবি। পরে আবার এই দুই শ্রেণির সব বইয়ে বানান ও তথ্যগত মিলিয়ে অন্তত ৪৩১টি ভুল চিহ্নিত হয়। শিক্ষাবর্ষ শুরুর চার মাস পর সেসব সংশোধনী পায় শিক্ষার্থীরা। এ কারণে তাদের শিক্ষা ক্ষতির মুখে পড়ে।

আবার মূল্যায়নপদ্ধতি সম্পর্কে নির্দেশনাও যাচ্ছে দেরিতে। ফলে নতুন এই ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষকদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। যেমন কয়েক দিন আগে টাঙ্গাইলের বাসাইলে গতানুগতিক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার আয়োজন করেছিল কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরে অবশ্য তা বন্ধ করা হয়।

আবার প্রথম শ্রেণিতে মূল্যায়ন নিয়ে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর চার মাস পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মূল্যায়ন নির্দেশিকা দিয়েছে। এতে প্রথম শ্রেণিতে কোনো প্রান্তিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে না। কিন্তু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে কেউ কেউ আগের মতোই পরীক্ষা নিচ্ছে।

দেশে সরকারি–বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন আছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি। এগুলোতে শিক্ষার্থী ২ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ।

নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২৯ মে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এ বছর থেকে চালু হচ্ছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের এর নানান দিক বুঝতে ও অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে শিক্ষার্থীরা দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে। এরপর উচ্চমাধ্যমিকে তা চালু হবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, এখন শিক্ষার অনেক কিছুই বিচ্ছিন্ন ও এলোমেলোভাবে হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাতে পরিকল্পনা করে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। এ খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা দরকার। এ ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। তবে এই কমিশনকে কর্তৃত্ব ও উপযুক্ত লোক দিতে হবে।

নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়িত হলো কতটা

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল বন্ধে জোরালো পদক্ষেপের অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে গত বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চারটি বিষয়ের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছিল। ওই ইশতেহারে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার শূন্যে এবং অষ্টম শ্রেণিতে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। প্রাথমিকে এই হার কমলেও এখনো তা ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ইশতেহারে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর ভেতর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বরাদ্দও রয়েছে। আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা
ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ কমেছে (১৩ দশমিক ৭ শতাংশ)। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছেন, মোট বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হোক।

শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের ঘাটতি

২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে গড়ে ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইসের) তথ্য অনুসারে, মাধ্যমিক গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। প্রাথমিকেও সংখ্যাটা একই রকম। প্রাথমিকে এখনো শিক্ষকের ৩৮ হাজার পদ শূন্য।

তবে অনেক বিদ্যালয়ে এই অনুপাত আরও নাজুক। যেমন রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে গড়ে ৬০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক আছেন।

ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, মাধ্যমিকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষক। ২০১৮ সাল থেকে এই হার একই জায়গায় আটকে আছে।

পিটিআইগুলোতে ১৮ মাসের কোর্সের সময় কমিয়ে ১০ মাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। এতে পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।

বেশির ভাগ কাজেই ধীরগতি

২০১৮ সালের আগস্টে ৩০১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ হয়েছিল। পরে আরও কয়েকটি কলেজ সরকারি হয়। কিন্তু বিপুল শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি দীর্ঘদিনেও সরকারি হয়নি। গত মে পর্যন্ত ১৩৩টি কলেজের শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণের অনুমোদন হয়েছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছরের ডিসেম্বরে এই কাজ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিল। এ নিয়ে শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ।

সরকারি কলেজশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হাসান খান বলেন, তাঁদের দাবি, দুই মাসের মধ্যে সব শিক্ষকের চাকরি সরকারি করতে হবে।

শিক্ষকদের চাকরি সরকারি খাতে আনতে যেমন ধীরগতি আছে, তেমনি ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজটিও চলছে ধীরগতিতে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষা আইন, স্থায়ী শিক্ষা কমিশনসহ বেশ কিছু বিষয় করার কথা থাকলেও হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতির অনেক বিষয় বাস্তবায়ন করছি, আবার অনেক কিছু করতে পারিনি। এখন আমরা বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনার চেষ্টা করছি।’

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা কমিশন করার কথা কেবল মুখে মুখে। ফলে ইউজিসি ‘নখদন্তহীন বাঘ’ হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো অনিয়ম হলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে না। তারা কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করতে পারে।

কোচিং-প্রাইভেটের চাপ বাড়ছে

২০১২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা করে বলেছিল, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে দিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সীমিতসংখ্যক (১০ জনের বেশি নয়) শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। কিন্তু এই নীতিমালা শুধু কাগজেই আছে। শিক্ষকেরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দেদার পড়াচ্ছেন।

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বন্ধ করা হলেও শিক্ষাবিদদের মতামত উপেক্ষা করে গত বছর আকস্মিক প্রাথমিক বৃত্তি চালু করা হয়েছে। এতে কোচিং-প্রাইভেট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদেরা।

করোনায় ক্ষতি জানা, পূরণে নেই ব্যবস্থা

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এমনিতেই শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিখন অর্জন করতে পারে না। এনসিটিবির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। এখন এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। অন্যান্য শ্রেণিতেও ক্ষতি হয়েছে।

এর আগে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, করোনাকালে অষ্টম শ্রেণির অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে মধ্যম ও উচ্চমাত্রায় শিখনঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়াসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লাসের বদলে উল্টো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা হয়েছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, এখন শিক্ষার অনেক কিছুই বিচ্ছিন্ন ও এলোমেলোভাবে হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাতে পরিকল্পনা করে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। এ খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা দরকার। এ ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। তবে এই কমিশনকে কর্তৃত্ব ও উপযুক্ত লোক দিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.