শেরপুরে চলছে হালখাতার মৌসুম

0
192
খাতা দেখে গ্রাহকদের বাকির পরিমাণ জানিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুর শহরের গোপালবাড়ী (বটতলা) এলাকার মেসার্স হক ট্রেডার্সে

একসময় শেরপুরে পয়লা বৈশাখে অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হালখাতা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এখন সে চিত্র বদলে গেছে। এখন বোরো ধান ঘরে তোলার সময়কে কেন্দ্র করে শেরপুরের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হালখাতার আয়োজন করা হয়। ফলে, শেরপুরে এখন চলছে হালখাতার মৌসুম।

জুন মাসের প্রথম দিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শেরপুর জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলের শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হালখাতা উৎসব হয়েছে। এ হালখাতা চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। একসঙ্গে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হালখাতা শুরু হওয়ায় শেরপুরে মিষ্টির চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে।

শহরের গোপালবাড়ী (বটতলা) এলাকার রড, সিমেন্ট, ঢেউটিন ও নলকূপ বিক্রির প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মো. রিপন মিয়া বলেন, মূলত গ্রামের কৃষকেরা তাঁদের গ্রাহক। এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই আশা করা যায়, অন্য বছরের তুলনায় এবার হালখাতায় বাকি আদায়ের পরিমাণ আশানুরূপ হবে।

গতকাল রাতে শেরপুর জেলা শহরের খরমপুর, নয়আনী বাজার, গোপালবাড়ী, সজবরখিলাসহ বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক রড-সিমেন্ট, স্যানিটারি, মেশিনারিজ, মনিহারি, স্বর্ণালংকার, কাঁচামালের আড়ত ও টিনের দোকানে হালখাতা উৎসব করতে দেখা গেছে। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাহারি রঙের কাগজ ও কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও অনেক নারী-পুরুষ হালখাতা করছেন। পুরোনো বছরের বাকি থাকা টাকাপয়সা পরিশোধ করে দিচ্ছেন। আর ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের মিষ্টি বা বিরিয়ানি দিয়ে আপ্যায়ন করছেন।

হালখাতা করতে আসা গ্রাহকেরা বাকির পরিমাণ জেনে নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকার মেসার্স পাপিয়া জুয়েলার্সে
হালখাতা করতে আসা গ্রাহকেরা বাকির পরিমাণ জেনে নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকার মেসার্স পাপিয়া জুয়েলার্সে

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন আর আগের মতো পয়লা বৈশাখে হালখাতা হয় না। ওই দিন ব্যবসায়ীরা নিয়ম রক্ষার জন্য শুধু নতুন খাতা ‘শুভক্ষণ’ করে রাখেন। এর কারণ শেরপুরের অর্থনীতি কৃষিনির্ভরশীল। পয়লা বৈশাখের সময় খেতের ধান কাঁচা ছিল। তখন মানুষের হাতেও টাকা থাকে না। ফলে ব্যবসায়ীদের দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করতে পারেন না কৃষকেরা। তাই বাকি আদায়ের জন্য বোরো ধান কাটার পর উপযুক্ত সময়। ফলে এ সময় অনেক ব্যবসায়ী দোকানে হালখাতার আয়োজন করেন।

হালখাতা করতে এসেছেন দুজন ক্রেতা। বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকার মেসার্স আহাম্মদ ট্রেডার্সে
হালখাতা করতে এসেছেন দুজন ক্রেতা। বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকার মেসার্স আহাম্মদ ট্রেডার্সে

গতকাল রাতে শহরের খরমপুর এলাকার পাপিয়া জুয়েলার্সে হালখাতা করতে আসেন মধ্যশেরী (শিংপাড়া) এলাকার গৃহিণী আনিকা ইবনাত আঁখি। তিনি বলেন, বেশ ভালোই লাগছে। হালখাতা উপলক্ষে গত বছরের বাকি টাকা পরিশোধের পর দোকানের মালিক রণজিৎ দেবনাথ মিষ্টি দিয়ে তাঁকে আপ্যায়ন করেছেন।

হালখাতায় বাকি টাকা কেমন আদায় হচ্ছে—জানতে চাইলে শহরের খরমপুর এলাকার স্যানিটারিপণ্যের প্রতিষ্ঠান আহাম্মদ ট্রেডার্সের মালিক আহাম্মদ আলী বলেন, মোটামুটি ভালোই। পুরোনো বাকি টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যেই পয়লা বৈশাখের পরিবর্তে বছরের এই সময়ে হালখাতা করা হয়। জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হালখাতা চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.