কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের ভাষানীগাঁওয়ের মেয়ে আমিনা বেগমের ১৯৯৬ সালে বিয়ে হয় পাশের গ্রামের জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মী আছাব আলীর সঙ্গে। বিয়ের পর আছাব আলী চা–বোর্ডের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে পঞ্চগড়ে বদলি হলে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সেখানে চলে যান।
চার বছর পর সেখান থেকে ফিরে এসে আছাব আলী আবার জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব নেন। তাঁদের সংসারে একে একে দুই কন্যাসন্তান আসে। খরচ বেড়ে যায়। স্বামীকে সাহায্য করতে ২০১৪ সাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বনের পাশের গ্রামবাসী হিসেবে বন রক্ষায় মানুষদের সচেতন করার দায়িত্ব পালনের কাজ শুরু করেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীর কাজও শুরু করেন।
২০১৬ সালে স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রশিক্ষণ নেন আমিনা। এ সময় বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেভরনের অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ (আইডিই) পরিচালিত উদ্যোক্তা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তিনি এই প্রকল্পের সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করে আইডিইর সহায়তায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় উদ্যোক্তা মেলায় যোগ দেন। মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে গল্প শোনেন।
আমিনাকে আইডিই পাঁচ হাজার টাকার মূলধনী সহায়তা দিয়েছিল। তা দিয়ে তিনি গ্রামে গ্রামে মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাসামগ্রী পৌছে দিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে কিছুটা সুলভে স্বাস্থ্যসামগ্রী কিনে গ্রামে বিক্রি করে আয় করছেন। আইডিইর স্থানীয় কর্মকর্তা নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া আমিনা বেগম ব্র্যাকে স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন। তিনি রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে পারেন। পাশাপাশি গ্রামের মানুষদের দোরগোড়ায় নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন, সঙ্গে ওষুধ ও স্বাস্থ্য উপকরণ পৌঁছে দেন।
প্রথম দিকে আয় ছিল খুবই সামান্য। তারপরও সংসারে কিছুটা সহায়তা হতো। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আমিনা বেগম বলেন, করোনার সময় টানা দুই বছর স্বাস্থ্যসেবাসামগ্রী নিয়ে মানুষের বাড়িতে যাওয়া যায়নি। তখন বেশ অর্থকষ্টে তাঁকে চলতে হয়েছে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই অসচ্ছল বলে তাঁদের কাছে ওষুধ ও স্বাস্থ্য উপকরণ পৌঁছে দিলেও সময়মতো টাকা পাননি। পাওনা টাকা বেশিরভাগ সময় মানুষের কাছে থেকে যায়।
উপকারভোগী ও সেবাভোগী নারী চম্পা বেগম (৪০) বলেন, ‘আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে হাটবাজারে ডাক্তারের কাছে যেতে হতো। এখন বাড়ির পাশে আমিনা বেগম আছেন। আমরা প্রথমে তাঁর সেবা ও পরামর্শ নিয়ে থাকি, প্রয়োজনে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ভালো হাসপাতাল ও ডাক্তারের কাছে যাই।’
স্বামী আছাব আলী বলেন, আমিনা আয় করে বেশ সহায়তা দিচ্ছে। তাঁরা বাড়িতে শাকসবজি চাষ করে নিজেরা খেতে পারছেন।