অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট থেকে স্থানীয়ভাবে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তা জানতে ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ী নেতাদের অভিমত প্রকাশ করছে প্রথম আলো। মো. আবদুল ওয়াদুদ রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। প্রথম আলোর কাছে জানিয়েছেন আগামী বাজেটে তাঁর প্রত্যাশার কথা।
সমতলের চেয়ে ভিন্নতা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়। অধিকাংশ এলাকা এখনো দুর্গম ও প্রত্যন্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষ সবকিছুতে পিছিয়ে রয়েছে। রাঙামাটিসহ তিন জেলায় পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করার যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে ইকো ট্যুরিজমে বিনিয়োগ যায়। তবে আলাদা ঋণ সুবিধা না থাকায় সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যটনে উন্নয়ন হচ্ছে না। ঋণের সুবিধা দিয়ে পরিকল্পিত ইকো ট্যুরিজম করা গেলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ফল উৎপাদনের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। চলতি মৌসুমে শুধু রাঙামাটি জেলাতেই আম, কলা, আনারস, লিচু ও কাঁঠাল উৎপাদিত হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এ পাঁচ ফলের বাজারমূল্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
শুধু মৌসুমি ফল চাষ করেই তিন জেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। এখানে ফল সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা স্থাপনেরও সুযোগ রয়েছে। সম্ভাবনাময় এই খাতে সরকার বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে পারে।
ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা সীমান্তে সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। সড়ক নির্মিত হলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাত করা যাবে। একই সঙ্গে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সঙ্গে ঠেগামুখে স্থলবন্দর নির্মাণকাজের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদটির অবস্থা এখন খুব খারাপ। ১৯৬০ সালের পর কোনো ড্রেজিং হয়নি। পলি জমার কারণে শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই এটি শুকিয়ে যায়। অথচ জেলার ছয় উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ হয় নৌপথে। হ্রদে পানি শুকিয়ে গেলে যাতায়াত ও নিত্যপণ্য সরবরাহে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা দরকার।
অন্যথায় বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। আমরা রাঙামাটিবাসী বলতে চাই, অতি দ্রুত কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করা হোক। ড্রেজিং করা হলে মৎস্য সম্পদও বাড়বে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। এখানে নেই কোনো শিল্পকারখানা, নেই ঋণের সুবিধা। সে জন্য বড় ধরনের ব্যবসা এখানে হচ্ছে না। আমি মনে করি, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভিন্ন পরিকল্পনা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমতলের বাজেট ও ব্যয়ের সঙ্গে পাহাড়ের বাজেট কোনোভাবে মিলবে না। একসময় পাহাড়িরা জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
এখন সময়ের সঙ্গে সব কিছু পাল্টে গেছে। জুমে আগের মতো ফলন হচ্ছে না। এখন মানুষের আয়ের উৎস বাঁশ, গাছ, পর্যটন ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য। তবে পর্যায়ক্রমে বন কমে যাওয়ায় বাঁশ ও গাছ থেকে আয় ক্রমেই কমছে। ফলে সম্ভাবনাময় আয়ের উৎস মৌসুমি ফল ও পর্যটনে বিশেষ বরাদ্দ ও উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয় না। তাতেও নানা শর্ত দেওয়া হয়। সারা দেশের মতো সহজ শর্তে ও বেশি ঋণ দেওয়া হলে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়বে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্যও পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করি।