বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখতেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকদের একজন হতে পারতেন তিনি, কিন্তু শুধু মানুষের শরীরের রোগ নয়, সমাজেরও রোগ সারাতে কাজ করেছেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভায় এসব কথা বলেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
গত ১১ এপ্রিল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮১ বছর বয়সে মারা যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আজ সমাজ অসুস্থ, ভীষণভাবে অসুস্থ। আমরা দেখছি, দেশের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। যত উন্নয়ন হচ্ছে, তত বৈষম্য বাড়ছে, মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী এটি চাননি। তিনি চাইতেন সকলের উন্নয়ন।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চলে যাওয়ায় দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে মন্তব্য করে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী অসাধারণ ছিলেন। তাঁর কাজ ছিল অবিশ্বাস্য। এমন মানুষ দ্বিতীয়টি পাওয়া কঠিন। তাঁর জীবন অনেক বেশি সত্য, তাঁর মৃত্যুর চেয়ে। আমরা তাঁকে নানা পরিচয়ে জানি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এটি একটি বড় পরিচয় এবং তিনি আজীবন মুক্তিযোদ্ধা।’
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ব্যক্তিগত মালিকানায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি যতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, এর কোনোটিতেই ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মালিকানা নেই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবুল হোসেন। স্মৃতিচারণা করেন গণবিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ওয়ালিউল ইসলাম, কনা চৌধুরী, মঞ্জুর কাদির আহমেদ প্রমুখ।
শুরুতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পুরোনো দিনের ছবি নিয়ে করা প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অতিথিরা।
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পরিবারের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্ত্রী শিরিন পারভীন হক ও ছেলে বারিশ চৌধুরী।
স্মরণসভায় স্মৃতিচারণা করে আসিফ নজরুল বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে বহু জীবিত মানুষের চেয়ে তীব্র ও উজ্জ্বলভাবে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমী। তাঁর দেশপ্রেম মানে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত মানুষের কল্যাণে কাজ করা, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করা। তাঁকে দেখলেই মনে হতো তিনি দেশের প্রয়োজনে, মানুষের কল্যাণে জীবন দিতে প্রস্তুত। অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ শেষে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেশ গঠনে, সমাজ গঠনে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছেন।