উত্তপ্ত মণিপুরে কমান্ডো অভিযানে অন্তত ৩০ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত

0
200
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংছবি: এএনআই

ভারতের মণিপুর রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অন্তত ৩০ কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছেন। আজ রোববার মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ নিয়ে গত এক মাসের কম সময়ের মধ্যে মণিপুরে সহিংসতায় প্রাণহানি শতাধিক ছাড়িয়ে গেল। সরকার এর আগে ৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল। সেই সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়াল ১০৫ জনে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য মণিপুর হাইকোর্টের সুপারিশকে কেন্দ্র করে ৩ মে থেকে সহিংসতা চলছে মণিপুরে। নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার সম্পত্তি। ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত থেকে মণিপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলছে। রাজ্যের কাকচিং জেলার সুগোনু, চুড়া চাঁদপুর জেলার কানকভি, পশ্চিম ইমফলের কাংচাপ, পূর্ব ইমফলের সাগলমাংসহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। পশ্চিম ইমফলে হামলার মুখে পড়েছেন বিজেপিদলীয় বিধায়ক কে রঘুমনি সিং।

মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালানোয় এসব সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়। সন্ত্রাসীরা একে ৪৭, এম ১৬ ও স্নাইপার রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজনকে নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।’

রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সেনাবাহিনীর যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করবেন না। সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিন। আমরা বেশ কিছুদিন ধরে সমস্যায় আছি। আমরা কোনো অবস্থাতেই আমাদের রাজ্যকে ভাগ হয়ে যেতে দিতে পারি না।’

রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, পৃথক রাজ্যের আন্দোলনকে গত কয়েক মাসে আরও তীব্র করে তুলেছে কুকিরা। অতীতে কুকিসহ অন্য উপজাতিদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবিতে জোরালো আন্দোলন হয়েছিল। গত এক মাসেই সেই আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে।

গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টকে রাজ্য সরকার বলেছিল, ‘মিয়ানমার থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের উচ্ছেদ করে আফিম চাষ এবং মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে গিয়ে রাজ্যে এ উত্তেজনা ছড়িয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের এমন অবস্থান জানিয়ে রাজ্য সরকার কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিল, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণেই বিপদে পড়েছে মণিপুর। তবে পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, সংঘাত মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রস্তুত আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

আসাম রাইফেলসহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্তত ১০ হাজার সেনা বর্তমানে মণিপুরে মোতায়েন আছেন। এ ছাড়া রাজ্য পুলিশের সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে।

আগামীকাল তিন দিনের সফরে মণিপুরে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সফরে গিয়ে তিনি বিবদমান সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের আগে এতসংখ্যক বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হওয়ায় রাজ্যে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.