সরকার দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে: জোনায়েদ সাকি

0
191
বরিশালে গণসংহতি আন্দোলনের প্রথম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। শনিবার বিকেলে নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার দেশের ১৪ কোটি মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। ক্ষমতাকে জমিদারি বানিয়ে এমন লুটপাট করেছে, যাতে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। প্রতিদিন মানুষের পকেট কাটা যাচ্ছে। কোনো কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ৩০০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবের ওপর সরকারের ন্যূনতম কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

শনিবার বিকেলে বরিশাল সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রথম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃষক-মজুর সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আমজাদ হোসেন।

সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ সভাপতিত্ব ও জেলা সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্যসচিব সাকিবুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, সারা দেশে সরকার পতনের আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য। সংবিধান সংস্কার ও শাসনব্যবস্থা বদলের কার্যকর আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন–সংগ্রামকে সরকার ভয় পাচ্ছে। জনগণের সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকারকে আওয়ামী লীগ প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। তাঁরা রাজপথে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে ফ্যাসিবাদী কায়দায় আন্দোলন দমন করতে চায়।

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের এই প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘এখন তারা প্রচারণাসহ নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে, সরাসরি পুলিশ ও গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে চায়। এগুলো হচ্ছে পতনের আগমুহূর্তের লম্ফঝম্ফ, যা বেশি দিন টিকবে না। জনগণ যখন রাজপথ দখলে নেবে, এই স্বৈরাচারী শক্তি পালাতে বাধ্য হবে। আমাদের সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

সরকার সিন্ডিকেট করে মানুষের পকেট কেটে ক্ষমতা ছাড়ার আগে বিদেশে টাকা পাচার করার প্রস্তুতি নিয়েছে অভিযোগ করে জোনয়েদ সাকি বলেন, ‘এদের হাতে মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। এরা দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে এবং গদি টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমরা সেটা হতে দেব না। আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারের পতন ও শাসনব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করব। গণমানুষের পক্ষের দল হিসেবে আমরা সাধারণ মানুষের বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠা করব, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটাব।’

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভুঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক-মজুর সংহতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আরিফুর রহমান, বরিশাল সদর উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব ইয়াসমিন সুলতানা, কড়াপুর ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক নূরজাহান বেগম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি জাবের মোহাম্মদ, সহসভাপতি হাসিব আহমেদ প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে দেওয়ান আবদুর রশিদ বলেন, জনগণ প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সর্বত্র জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বরিশাল নগরীর বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সারা দেশে পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে বরিশালের সুনাম ছিল। কিন্তু গত এক দশকে বরিশালের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। পুরো দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতি এক পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বরিশাল নগরী আজ চাঁদাবাজির নগরীতে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ সড়ক বেহাল। খালগুলো দখল হয়ে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে বরিশাল শহর পানিতে তলিয়ে যায়। এসব পরিস্থিতি থেকে জনগণ আজ মুক্তি চায়।

সন্ধ্যায় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেওয়ান আবদুর রশিদকে সমন্বয়কারী ও আরিফুর রহমানকে নির্বাহী সমন্বয়কারী করে গণসংহতি আন্দোলনের ১৯ সদস্যের বরিশাল জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.