ফুল গাছটার আদি নিবাস আফ্রিকার মরু অঞ্চলে, বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে কুড়িগ্রামে

0
110
কুড়িগ্রামের নার্সারিতে ফুটেছে অ্যাডেনিয়াম ফুল

অ্যাডেনিয়ামের আদি নিবাস আফ্রিকার মরু অঞ্চল। ইংরেজি নামও তাই ‘ডেজার্ট রোজ’। বাংলায় মরু গোলাপ। গাছটা আমাদের দেশেও অনেকের ছাদবাগানে শোভা পায়। চারা তৈরি করে কেউ কেউ বিক্রিও করেন। কুড়িগ্রামে এবার ফুল গাছটার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন দুই ভাই। তাঁদের বাগান ঘুরে রঙিন মরু গোলাপের রূপে মুগ্ধ হয়েছেন সফি খান

আফ্রিকার মরু গোলাপ কুড়িগ্রামে চাষ হচ্ছে জেনেই ছুটলাম কুমোরপুর এলাকার ধরলা নদীর তীরে। নার্সারির নাম বেবি প্ল্যান্ট। এক বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে নার্সারিটি। পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ি। ওপরে প্লাস্টিকের জাল, তার নিচে কয়েক হাজার ছোট ছোট অচেনা গাছ স্বাগত জানাল। গাছগুলোর গোড়া গোল আর মোটা, তবে শরীরটা লম্বা। অনেকটা রসুনগাছের মতো। প্রথম দেখাতে মনে হয় বনসাই। দেশি কোনো প্রজাতির সঙ্গেই মিলল না অ্যাডেনিয়াম বা মরু গোলাপ। গাছগুলোর মাথায় নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। প্রচণ্ড রোদে ফুলের রং আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল।

ফুল গাছ দেখভাল করছিলেন আবদুস ছালাম। তিনি বললেন, ‘এগুলা ফুল জীবনে দেখি নাই। ভাতিজা দুজন যেভাবে পরামর্শ দেন, সেভাবে কাজ করছি। বহু মানুষ দেখবার আসে, কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন পাঁচ–ছয় হাজার টাকার গাছ বিক্রি করি।’

নার্সারিতে অ্যাডেনিয়াম ফুল গাছের চারা
নার্সারিতে অ্যাডেনিয়াম ফুল গাছের চারা

জানা গেল এই ফুলচাষের উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান। পেশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তাঁর দেখাও মিলল। মিজানুর রহমান বললেন, ‘২০১৯ সালে থাইল্যান্ডের নগোজ এলাকায় প্রথম এই ফুলের বিশাল বাগান দেখতে পাই। বনসাই প্রকৃতির গাছগুলো ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে দেখে মুগ্ধ হই। তখন থেকেই এ ফুলের সৌন্দর্য মাথায় চেপে বসে।’

থাইল্যান্ডে অ্যাডেনিয়াম বাগানের এক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই গাছ তাঁরা রপ্তানি করে থাকেন। গাছের দাম শুনে আরও অবাক হন মিজান। আকার ও বয়সভেদে একেকটি গাছ নাকি সাত থেকে আট লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়!

বাংলাদেশে কি এই ফুলের বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব? খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শুধু থাইল্যান্ডেই নয়, তাইওয়ান, ভারতসহ বেশ কিছু দেশেই অ্যাডেনিয়াম ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। তাই এই গাছ বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও চাষ সম্ভব। সত্যি বলতে কী, দেশের অনেক শৌখিন ছাদবাগানি চাষও করছেন।

চারা কিনতে নার্সারিতেও আসেন অনেকে
চারা কিনতে নার্সারিতেও আসেন অনেকে

ছাদবাগান থেকে নার্সারি

২০২০ সালে থাইল্যান্ড থেকে অ্যাডেনিয়ামের বিভিন্ন জাতের বীজ সংগ্রহ করেন মিজান। তারপর তাঁর ছাদবাগানে লাগান। গাছ বড় হয়ে বাহারি ফুল ধরে। ছাদবাগানে দুই বছর ধরে গাছগুলোর পরিচর্যা করে বিস্তর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন মিজান। ফুল ফুটলে অ্যাডেনিয়ামের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ব্যাপক সাড়াও পান। অনেকে কিনতে চান। তারপর আগ্রহীদের কাছে বিক্রি শুরু করেন তিনি।

এরই মধ্যে মিজানুর রহমানের কৃষিবিদ বড় ভাই শাহীনুর ইসলাম একদিন তাঁর বাসায় এসে অ্যাডেনিয়াম দেখে মুগ্ধ। দুই ভাই কথা বলে তখনই সিদ্ধান্ত নেন ফুলগাছটির বাণিজ্যিক চাষ করবেন। দুজনে পরামর্শ করে চলে যান গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম। নিজেদের জমিতে নার্সারি গড়ে তোলার কথা জানান পরিবারের সদস্যদের। দুই ভাইয়ের কথা শুনে রীতিমতো হাসাহাসি করেন তাঁরা। সেই হাসাহাসিতে শামিল হয় গ্রামের মানুষও। তাঁরা বাবার কাছে জমি চাইলে তিনিও নিরুৎসাহিত করে বলেন, ‘এই গ্রামে দামি গাছ আর ফুল কে কিনবে। তোমরা না থাকলে দেখাশোনা করবে কে?’ অনেক চেষ্টার পর তাঁরা তাঁদের বাবাকে রাজি করান। নিজেদের জমিতেই গড়ে তোলেন নার্সারি।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সেই নার্সারিতেই বাণিজ্যিকভাবে অ্যাডেনিয়াম চাষ শুরু করেন তাঁরা। মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের নার্সারিতে ৪০ প্রজাতির অ্যাডেনিয়াম আছে।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন উদ্যোক্তা তৈরির কথাও ভাবছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। দেশের সব জেলায় আমাদের গাছ যাচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রচুর সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তাই প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.