আবাসন খাতকে বর্তমানে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফলে এই খাতে সবাই বিনিয়োগ করছেন। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত—সবাই চান নিজের একটা স্থায়ী ঠিকানা। তাঁদের সেই স্বপ্নপূরণেই কাজ করছে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানি। বর্তমানে ঢাকায় জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। যথাযথভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ভবিষ্যতের আবাসন কেমন হবে? জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাওয়া। নানা কারণেই দেশের আবাসন খাতের পরিবর্তন হবে। শুধু বাসস্থানেই নয়, কলকারখানাসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণেই পরিবর্তন হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে। এর বড় কারণ হলো, জনসংখ্যা ও জলবায়ুর পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পরবর্তী প্রজন্মের আবাসনের ধরনে আসবে বিশাল পরিবর্তন। নকশা, নির্মাণের উপকরণে পরিবর্তন দেখা যাবে ভবিষ্যতে। এ ছাড়া খরচ কমিয়ে ছোট আবাসনের দিকে ঝুঁকছে বৃহৎ জনগোষ্ঠী। ‘বাসস্থানের জন্য নতুন কিছু’ ধারণাটির প্রচলন বাড়বে বলে ধারণা আবাসন খাতসংশ্লিষ্টদের। এসব ‘নতুন ধারণা’ আমাদের দেশে নতুন হলেও বিশ্বের প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু নয়। বর্তমানে বাড়ি নির্মাণে সবুজ বনায়নের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সবুজে বাঁচুন—কথাটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য বাড়ি নির্মাণে সবুজের সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করছে সবাই।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে সবাই বসবাস করতে পারেন, এমন আবাসনই বেশি গুরুত্ব পাবে ভবিষ্যতে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেন তাঁদের সাধ্যের মধ্যে প্লট বা ফ্ল্যাট ক্রয় করতে পারেন, সেই চিন্তা থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে আবাসন খাত। সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আমরাও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে কাজ করছি।’
উঁচু ভবন কিন্তু ছোট বাসা—এই পরিকল্পনার দিকে যাচ্ছেন রাজধানীর আবাসন খাত ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও বিস্তার শুরু করেছে আবাসন ব্যবসা। ঢাকার পর আবাসন খাতের সর্বোচ্চ বিকাশ হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো নগরের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন উপজেলাতেও। চট্টগ্রাম শহরে যেমন দেখা মেলে ছিমছাম সাজানো-গোছানো বাড়ি বা ভিলার, তেমনি দেখা মেলে সুউচ্চ আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট এবং আকাশছোঁয়া বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ভবনেরও।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য হিসেবে তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রামের ৮৩টিরও বেশি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাদের ২৫০টির বেশি প্রকল্পের কাজ চলমান।
পূর্ব নাসিরাবাদে ‘আপন নিবাস’ নামের একটি প্রকল্প দিয়ে ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামে প্রথম কোনো অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপরই নব্বই দশকের শেষ ভাগে এসে নতুন করে চট্টগ্রামে আবাসন ব্যবসার পালে লাগে সুবাতাস, ইকুইটি ও স্যানমার প্রোপার্টিজের হাত ধরে।
চট্টগ্রামের তুলনামূলক গোছানো এলাকাগুলো খুলশী, নাসিরাবাদ হাউজিং, জিইসি মোড় এবং এর আশপাশ মেহেদীবাগ, জামালখান, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ ইত্যাদি এলাকায় চোখে পড়ে অসংখ্য ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টসমৃদ্ধ আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্পের। নগরীর আশপাশে আছে ল্যান্ড প্রজেক্টও। চট্টগ্রামে বর্তমানে এক থেকে চার হাজার বর্গফুট সাইজের ফ্ল্যাট রয়েছে।
শিক্ষানগরী রাজশাহীতেও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আবাসন খাত। রাজশাহীর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন (রেডা) আবাসন খাতকে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য আয়োজন করে আবাসন মেলার। রেডার সদস্য ২৭টি প্রতিষ্ঠানই রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসা করছে। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আল-আকসা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ‘রাজশাহীতে মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের বসবাস। তাই তাদের টার্গেট করেই আবাসন ব্যবসা পরিচালিত হয়। মধ্যবিত্তরা যেন কিনতে পারেন, সেই দামের মধ্যে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম নির্ধারণ করা হয়।’
বিভাগীয় শহরের মধ্যে বরিশাল, সিলেট, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রংপুরেও ধীরে ধীরে বিকাশ ঘটছে আবাসন ব্যবসার। শুরু হয়েছে আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ। এ ছাড়া কুমিল্লা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, নরসিংদীসহ বড় প্রায় প্রতিটি জেলায় আবাসন খাত গড়ে উঠছে।