ঘূর্ণিঝড়ের ১৪ বছর পরও এখনো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবের ১৪ বছর আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। ঝড়ে সুন্দরবন-সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ওই ইউনিয়নে নারী-শিশুসহ ৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। শুধু শ্যামনগরেই গৃহহীন হন ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৩ জন। ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, মাছের ঘের তলিয়ে যায়। রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পড়েন হাজারো মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের ১৪ বছর পরও এখনো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় আইলার কারণে ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে এখনো বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন। খাবার পানি ও কর্মসংস্থানের সংকটে অনেকে এলাকা ছেড়ে শহরে পাড়ি দিয়েছেন। কৃষক বা চিংড়ির ঘেরের মালিকদের অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। মাঝে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নিত্যনতুন দুর্যোগে তাঁরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না।
গাবুরা ইউনিয়নের পাশ্বেমারী গ্রামের মো. কবির মোড়ল (৫৫) আইলার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে উপকূল রক্ষা বাঁধের ওপর বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘আইলার পর চৌদ্দডা বছর পার হুয়েছে, আজও আমরা ঘুরে দাঁড়াতি পারিনি। ভাত-পানির তে শুরু করে কাজ-কর্ম, সবখানে অভাব। সর্বনাশা আইলা পথে বসিয়ে দে গেছে।’
গাগড়ামারী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কাঞ্চন বিবির আইলার আগে ঘরবাড়ি ও গরু-ছাগল সবই ছিল। প্রলয়ংকরী আইলার তাণ্ডবের পর থেকে তিনি নিঃস্ব। বিধবা কাঞ্চন বিবি এলাকায় কাজ না পেয়ে এখন ভিক্ষা করে পেট চালান। সুন্দরবনে প্রবেশে বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কাজের সন্ধানে একমাত্র ছেলে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
শুধু কবির মোড়ল বা কাঞ্চন বিবি নন, আইলার তাণ্ডবের জের বয়ে বেড়াচ্ছে শ্যামনগরের উপকূলজুড়ে বসবাস করা হাজারো পরিবারে। যদিও এরপর আম্পান, বুলবুলের মতো কয়েকটি বড় দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আইলার আগে উপকূলের খাবার পানির প্রধান উৎস ছিল পুকুর। কিন্তু আইলার পর একে একে ১৪ বছর পার হলেও আজও পুকুরের পানি খাওয়ার উপযোগী হয়নি। ওই ঝড়ের পর এলাকার গাছগাছালি শূন্য হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
গাবুরা ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, আইলার ক্ষতি এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। আইলার পর এলাকায় কর্মসংস্থানের সংকট প্রকট হয়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরাকে মডেল ইউনিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে নতুন প্রযুক্তিতে বাঁধ তৈরির জন্য ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। বাঁধের পাশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বনায়ন সৃষ্টির কাজ চলছে।