রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য চীনের বিশেষ মনোযোগ

0
147

আগামীকাল আসছেন চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং। দুই মাসের মধ্যে চীনের কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার এটি দ্বিতীয় ঢাকা সফর।

ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের আওতায় এ বছরের মধ্যে ছোট পরিসরে হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে চীন। ২৭ মে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং এ প্রসঙ্গে গুরুত্ব দেবেন। এ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাত হতে পারে। তিন দিনের এ সফরকালে তিনি বাংলাদেশ থেকে বেইজিংয়ে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। আগামীকাল ২৬ মে তাঁর ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রে গতকাল জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথমার্ধে চীনের পক্ষ থেকে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়। আর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বেইজিং থেকে কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার এটি দ্বিতীয় ঢাকা সফর। অবশ্য এর আগে গত জানুয়ারিতে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং।

গত মাসে অনেকটা নীরবে ঢাকা ঘুরে যান চীনের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত দেং শিজুন। এর দুই সপ্তাহ পরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য ১৮ এপ্রিল কুনমিং যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব। ফলে ২৭ মে দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আলোচনা হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সফরের সময় চীনের ভাইস মিনিস্টার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া তিনি পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন। পদ্মা রেলসেতুতে অর্থায়ন করছে চীন। বেইজিং বাংলাদেশের এই রেলসেতুকে তাদের অঞ্চল ও পথের উদ্যোগের (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ–বিআরআই) একটি অংশ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মূলত পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে চীনের উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে পরিস্থিতি আলোচনায় আসবে।

এবার ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং এমন একটা সময়ে ঢাকায় আসছেন, যখন নির্বাচন ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একধরনের টানাপোড়েন দৃশ্যমান।

গত মাসে অনেকটা নীরবে ঢাকা ঘুরে যান চীনের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত দেং শিজুন। এর দুই সপ্তাহ পরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য ১৮ এপ্রিল কুনমিং যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব। ফলে ২৭ মে দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আলোচনা হবে।

কূটনৈতিক সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় এলেও সুন ওয়েইডংয়ের সফরে বেইজিংয়ের মনোযোগ থাকবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু এবং এই অঞ্চলকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কী হচ্ছে তা বোঝা। বিশেষ করে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির (আইপিও) ঘোষণা, এরপর প্রধানমন্ত্রীর জাপান এবং ওয়াশিংটন সফরের পরপর হঠাৎ করেই চীনের পক্ষ থেকে তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ঢাকা সফরের প্রস্তাবটি আসে। সাধারণত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের সফর আয়োজনের বিষয়ে কিছুটা আগেভাগে থেকে আলোচনা থাকলেও সুন ওয়েইডংয়ের সফরটি হচ্ছে কিছুটা তড়িঘড়ি করে।

আলোচনার জন্য কক্সবাজারে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল

অনেকটা কাকতালীয় ঘটনা হলেও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এ বছর চীনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের তিনটি সফরের সঙ্গে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের কোনো না কোনোভাবে যোগসূত্র আছে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের ঠিক আগেভাগে ঢাকায় যাত্রাবিরতি করেছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং। কয়েক ঘণ্টার ওই যাত্রাবিরতির সময় তিনি বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন।

এরপর গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ওয়াশিংটন যাওয়ার ঠিক এক দিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন মিয়ানমারবিষয়ক চীনের বিশেষ দূত দেং সিজুন। ওই সময় তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনা করেন। চীনের বিশেষ দূতের ওই সফরের ধারাবাহিকতায় পরে এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছিল। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে আপাতত তা পিছিয়ে গেছে।

এরপর এবার ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং এমন একটা সময়ে ঢাকায় আসছেন, যখন নির্বাচন ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একধরনের টানাপোড়েন দৃশ্যমান। বিশেষ করে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশের পুলিশি নিরাপত্তা হঠাৎ প্রত্যাহারের পর ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ সফরে এসে চীনের ভাইস মিনিস্টার বাংলাদেশের আইপিও ঘোষণা, জাপান সফরে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সম্পর্ক জানতে ও বুঝতে চাইবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দিল্লি সফরের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ওই সফরের কাছাকাছি সময়ে শেখ হাসিনাকে বেইজিং নেওয়ার ব্যাপারে চীনের আগ্রহের কথা শোনা যাচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.