সম্পদে এগিয়ে নজরুল, শিক্ষায় আনোয়ারুজ্জামান ও মাহমুদুল

0
143
মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান ও নজরুল ইসলাম

সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপিদলীয় বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী না হওয়ায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে। এই তিন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল)। তাঁর বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। তাঁরা দুজনই স্নাতক ডিগ্রিধারী।

প্রার্থীদের হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁদের হলফনামায় সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। এতে প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি তাঁদের আয়, আয়ের উৎস, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা, দেনাসহ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মোট ১১ জন প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ছাড়াও জাকের পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন মো. জহিরুল আলম। বাকিরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁরা হলেন মো. আবদুল হানিফ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান খান, সামছুন নূর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন, জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. শাহ জাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।

সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই-বাছাই করে অসংগতি পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিএ (সম্মান) পাস। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। তাঁর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। আনোয়ারুজ্জামানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদই আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং ২ সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে। তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালংকার। আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৩ বিঘা কৃষিজমি, ২৩ শতক অকৃষিজমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে। তবে তাঁর কোনো দায় বা দেনা নেই।

স্বশিক্ষিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটা মামলা তদন্তাধীন। এ ছাড়া অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হলেও সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

নজরুল ইসলামের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। পাশাপাশি অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর একটি বিএমডব্লিউ, একটি টয়োটা প্রাডো, চারটি কার্গো ভ্যান, আটটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল আছে। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর নামে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। নজরুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৩৫ দশমিক ৭৮ শতক অকৃষিজমি, একটি ফ্ল্যাট এবং চারটি দালান ও টিনশেড বাড়ি আছে। তাঁর ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকার ঋণ আছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান এলএলবি পাস। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে একটা মামলা হলেও বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তাঁর কোনো দায় বা দেনা নেই। মাহমুদুল হাসানের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাহমুদুলের যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক দোকান ও বাড়ি আছে। এসব সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ তাঁর।

প্রার্থীদের হলফনামার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট প্রবাসী–অধ্যুষিত অঞ্চল। অনেক প্রার্থীর বিদেশে নাগরিকত্বও থাকে। তাই হলফনামায় আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন বিদেশি নাগরিকত্ব আছে কি না, থাকলে সেখানকার সম্পদ ও আয়ের বিস্তারিত বিবরণ। এ সীমাবদ্ধতা দূর করা উচিত। এ ছাড়া প্রার্থীরা সঠিক তথ্য দিলেন কি না, তা-ও সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.