মৌলভীবাজারের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানির জন্য অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যাম্বুলেন্সে জ্বালানি হিসেবে অকটেন ব্যবহৃত হয়। প্রতি মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জ্বালানির চাহিদা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। অধিদপ্তর থেকে কয়েক মাস পরপর একসঙ্গে বরাদ্দ করা টাকা পাঠানো হয়। এ সময় স্থানীয় কোনো ফুয়েলিং স্টেশন থেকে বাকিতে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি কেনা হয়। বরাদ্দের টাকা পাওয়ার পর ফুয়েলিং স্টেশনের বকেয়া বিল পরিশোধ করা হয়। এদিকে জ্বালানির টাকা না থাকায় গত জানুয়ারি মাস থেকে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বাছিরপুর এলাকায় মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের এক পাশে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পড়েছে। কমপ্লেক্সের আশপাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন চারটি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখা। চালকেরা রোগীদের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে একটি ভবনের বারান্দায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি রাখা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের কয়েকটি ওষুধ ও চায়ের দোকানের মালিক বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি অ্যাম্বুলেন্সের মালিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশপ্রহরী মুজিবুর রহমান এবং আরেকটির মালিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী মৌলা মিয়া। বাকি দুটির মালিক স্থানীয় আরও দুই ব্যক্তি। এসব অ্যাম্বুলেন্সে প্রতিদিন ৮-১০ জন রোগীকে মৌলভীবাজার সদরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার হাসপাতাল বা সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাড়ায় পরিবহন করা করা হয়।
নৈশপ্রহরী মুজিবুর রহমান বলেন, সিলেটে রোগী পরিবহনে তাঁরা সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া নেন।
স্থানীয় বাছিরপুরের বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকজন বেশি চিকিৎসা নেন। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সিলেটে গেলে ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া লাগে। আর বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। এতে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকজন বেশি কষ্টে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্থানীয় একটি ফুয়েলিং স্টেশনের প্রায় চার লাখ টাকার জ্বালানি বিল তাঁদের কাছে বকেয়া পড়ে ছিল। সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বরাদ্দের টাকা মেলে। পরে বিল পরিশোধ করা হয়। এরপর ওই ফুয়েলিং স্টেশনের মালিক বাকিতে জ্বালানি বিক্রিতে আর রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সমরজিৎ সিংহ বলেন, জ্বালানি কেনার টাকা নেই। এ ছাড়া জুড়ীর ফুয়েলিং স্টেশনগুলো ছোট। সেখানে জ্বালানির মজুত কম থাকে। মালিকেরা বাকিতে জ্বালানি বিক্রিতে রাজি হন না। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্স চালানো যাচ্ছে না।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ সম্প্রতি মুঠোফোনে বলেন, জুড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানির জন্য পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলায় একটি ফুয়েলিং স্টেশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠান আগামী ১ জুন থেকে জ্বালানি সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে। জ্বালানি পেলে অ্যাম্বুলেন্স পুনরায় চলবে। তখন রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।