প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নিতে চাওয়ায় প্রাথমিকের ৩ শিক্ষক বরখাস্ত

0
199
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা নির্বাচিন হন। করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেওয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন।

এর ৬৮ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাদেরকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করে পত্র দেন।

এ আদেশে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক না নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নিতে চেয়েছিলেন।

একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানও সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিলেন।

এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নিতে চাওয়া অপরাধ? প্রধানমন্ত্রীই বরাবর প্রাথমিক শিক্ষা পদক সংশ্লিষ্টদের হাতে এ পদক তুলে দিয়ে এসেছেন। এবার হয়তো কোনো কারণে তা পারেননি। কোনো শিক্ষকের আকাঙ্খা হতেই পারে তিনি পদকটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে থেকে নেবেন। এ চাওয়ার কারণে কাউকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা যায়?

একই মন্ত্রণালয়ের অপর এক সাবেক সচিব বলেন, আদেশটি আদৌ আইনানুগ হয়নি। সরকারি চাকরি থেকে কাউকে সমায়িক বরখাস্ত করতে গেলে প্রথমে তাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিতে হয়। এর জবাব সন্তোষজনক মনে না হলে পরবর্তী ধাপে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে হয়। এখানে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, পদক নিতে অস্বীকৃতি কোথায় জানালাম? আমি পদক তো নিয়েছি। মহড়ার দিন আমরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক নেওয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নিতে চাওয়া তো অপরাধ নয়। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক পাওয়া আমাদের প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছে স্বপ্নের মতো।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নিতে চাওয়ার অপরাধে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করলে এমন অপরাধে আমি বারবার বরখাস্ত হতে চাই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা সেরকমই ছিল। এ জন্য কারণ না দর্শিয়ে তাকে (খায়রুন নাহার লিপি) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.