বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৯ ধারা বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করতে পারে:মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান

0
218
‘শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরসনে প্রচারাভিযান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ, ছবি: মানবাধিকার কমিশনের সৌজন্যে

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৯ ধারা সংশোধন করার সুপারিশ করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, আইনের ১৯ ধারা সুনির্দিষ্ট না হয়ে পরিধির ব্যাপকতার কারণে বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করতে পারে।

আজ সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরসনে প্রচারাভিযান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশন। মানবাধিকার কমিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭–এর ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’

মানবাধিকারকর্মীরা এই ধারাটির বিষয়ে অনেক আগে থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এই ধারার ফলে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।

আজ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাল্যবিবাহের ছোবলে পড়ে নারীর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহের কারণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। একটি গবেষণায় এসেছে, অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে প্রায় ১৯ ভাগ, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে ২৫ ভাগ বাল্যবিবাহ হয়। এ ছাড়া কম বয়সে বিয়ে দিলে যৌতুকের পরিমাণ কম দিতে হয় বলে মনে করেন মা–বাবা।’

কামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্থানীয় নেতা ও ধর্মীয় নেতাদের বেশি করে সম্পৃক্ত করা জরুরি। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৯ ধারায় যে বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট না হয়ে পরিধির ব্যাপকতার কারণে বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করতে পারে। তাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইনের এই ধারা সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বাল্যবিবাহের কারণে অন্যান্য আর্থসামাজিক প্রতিবন্ধকতা, যেমন মাতৃমৃত্যু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মেয়েদের ঝরে পড়া ইত্যাদি দেখা যায়। সে জন্য বাংলাদেশ সরকার মেয়েশিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধ করার জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করেছে। এর ফলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। বাল্যবিবাহ রোধে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের সচেতন করা বেশি জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত ‘লিসিনিং টু ব্রাইডস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনা করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের ন্যাশনাল ডিরেক্টর সুরেশ বারলেট, সিনিয়র ডিরেক্টর অপারেশনস চন্দন গোমেজ এবং সংগঠনটির উপপরিচালক নিশাত সুলতানা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.