সিদ্দারামাইয়াই হচ্ছেন ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন ডি কে শিবকুমার। চার দিনের জল্পনা শেষে আজ বৃহস্পতিবার দিল্লির কংগ্রেস সদর দপ্তরে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন এআইসিসির সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেনুগোপাল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কর্ণাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা রণদীপ সুরযেওয়ালা।
বেনুগোপাল ও সুরযেওয়ালা দুজনেই বলেছেন, শিবকুমারই হবেন একমাত্র উপমুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই সঙ্গে তিনি রাজ্যের সভাপতি পদেও বহাল থাকবেন। তাঁরা বলেন, আগামী বছর লোকসভা ভোট। সেই বিবেচনায় শিবকুমারকে রাজ্যের সভাপতি পদে বহাল রাখা হচ্ছে। জয়পুরে দলের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যদিও ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি গৃহীত হয়েছিল।
বেনুগোপাল বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা শপথ নেবেন আগামী শনিবার। এ উপলক্ষে সমমনা সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস নেতারা একথাও বুঝিয়ে দিলেন, ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা পরের কথা। আপাতত মুখ্যমন্ত্রী পদ ভাগাভাগির প্রশ্ন নেই। বেনুগোপাল এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ক্ষমতা ভাগাভাগির অর্থ হলো রাজ্যের মানুষের সঙ্গে ক্ষমতার আদান–প্রদান।’ মনে করা হচ্ছে, এখনই ওই প্রশ্নে না গিয়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে।
কেন মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ে চার দিন লাগল এমন প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে বারবার ওঠে। বেনুগোপাল উত্তরে বলেন, ‘আমরা সব সময় চেয়েছি সবার সঙ্গে কথা বলে মতৈক্যে পৌঁছতে।’ তিনি বলেন, ‘সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমার দুজনেই মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগ্য। তাঁরা ছাড়াও নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য বা অধিকারী আরও রয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী একজনই হবেন। সে জন্য গণতান্ত্রিকভাবে সর্বসম্মত হতে কিছুটা সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।’
কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ৭৬ বছরের সিদ্দারামাইয়া সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে, তা আমারও মত। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।’
শিবকুমার একটি টুইট করেছেন। তাতে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে একটি ছবির নিচে লেখা হয়েছে, ‘কর্ণাটকের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত। রাজ্যবাসীর কল্যাণ আমাদের অগ্রাধিকার। তা নিশ্চিত করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে ৬১ বছরের শিবকুমার গোঁ ধরে ছিলেন। তাঁর যুক্তি, দলকে জেতানোর অঙ্গীকার তিনি করেছিলেন। সেটা তিনি রক্ষাও করেছেন। তা ছাড়া একই ব্যক্তি কেন বারবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন? তবে সেই সঙ্গে তিনি একথাও জানিয়েছিলেন, দলের সিদ্ধান্ত যা–ই হোক, তিনি বিদ্রোহ করবেন না। ব্ল্যাকমেইল করবেন না। কাউকে পেছন থেকে ছুরিও মারবেন না।
সিদ্দারামাইয়ার পক্ষে আবার অধিকাংশ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। কংগ্রেসের খবর অনুযায়ী, ১৩৫ বিধায়কের মধ্যে ৮৫ জনই সিদ্দারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে আগ্রহী।
কংগ্রেস সূত্রমতে, এই টানাপড়েনের অবসান ঘটাতে শেষ পর্যন্ত আসরে অবতীর্ণ হন সোনিয়া গান্ধী। গত বুধবার রাতে সোনিয়ার সঙ্গে কথা বলার পর ‘রাজ্য ও দলের স্বার্থে’ শিবকুমার উপমুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি হন। দুর্নীতির অভিযোগে শিবকুমারকে ইডি গ্রেপ্তার করে তিহার কারাগারে রেখেছিল। সে সময় সোনিয়া তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলেন। শিবকুমারও সোনিয়াকে কথা দিয়েছিলেন, কর্ণাটক জিতে তাঁকে উপহার দেবেন।