‘যেখানে সম্ভাবনা, সেখানেই গিল। এগিয়ে যাও এবং পরবর্তী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দাও। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন’—গত রাতে আইপিএলে গুজরাট টাইটানসের হয়ে শুবমান গিলের সেঞ্চুরি দেখে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে কথাগুলো কে লিখেছেন, জানেন? বিরাট কোহলি। তর্ক সাপেক্ষে যাঁকে বর্তমান প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যান ভাবা হয়, সেই কোহলিই জাতীয় দলের সতীর্থের ইনিংসে মুগ্ধ হয়ে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন।
ব্যাটিং–নৈপুণ্যের প্রদর্শনীতে গিল দেখিয়ে চলেছেন, সময়টা এখন তাঁর। মাঠের চারপাশে নান্দনিক সব শট খেলবেন, পরিণত মস্তিষ্কে ইনিংসগুলো বড় করবেন, দলকে পৌঁছে দেবেন জয়ের বন্দরে—ব্যাপারগুলো যেন অভ্যাসে পরিণত করেছেন গিল। ৪৫ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিন সংস্করণেই আছে সেঞ্চুরি। সাত সেঞ্চুরির পাঁচটিই করেছেন এ বছর। ২৩ বছর বয়সী ওপেনারের আক্ষেপ বলতে ছিল আইপিএলে সেঞ্চুরি না পাওয়া। কাল সেটাও পেয়ে গেছেন।
আইপিএলে ব্যাট হাতে প্রথমবার তিন অঙ্কের স্বাদ পেয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দুইয়ে (৫৭৬ রান) উঠে এসেছেন গিল। তাঁর ওপরে আছেন শুধু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি (৬৩১ রান)। গুজরাটও সবার আগে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে।
এ তো গেল ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা আর দলীয় অর্জনের কথা। কাল সেঞ্চুরি করে বিরল এক কীর্তিই গড়েছেন গিল। তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে একই বছর টেস্ট, ওয়ানডে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ও আইপিএলে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এর আগে এমন অর্জন ছিল শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে ও অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের। জয়াবর্ধনে রেকর্ডটা করেছিলেন ২০১০ সালে, ওয়ার্নার ২০১৯ সালে।
সীমানায় ফিল্ডিংয়ে দাঁড়াতেই গিলের উদ্দেশে ‘সারা সারা’ রব, কোহলির রসিকতা
আইপিএলে গত রাতে সেঞ্চুরির আগে এ বছর ভারতের হয়ে পাঁচবার তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন গিল। তিনটি ওয়ানডেতে ও একটি করে টি-টোয়েন্টি ও টেস্টে। এর মধ্যে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও আছে গিলের। কাল যে দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন, সেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মাঠ রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে গত ১৮ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানেডেতে ২০৮ রান করেছিলেন। পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজে করেছেন আরেকটি সেঞ্চুরি।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে গিলের একমাত্র সেঞ্চুরিটাও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। কোথায়? আইপিএলে নিজের দল গুজরাটের মাঠ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এ বছর টেস্টে সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন গত মার্চে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর বছরের প্রথম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৫৩টি সেঞ্চুরি করা জয়াবর্ধনে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ও আইপিএলে এ স্বাদ পেয়েছেন একবার করে। সেটা ১৩ বছর আগে। ২০১০ সালে সব সংস্করণেই একটি করে সেঞ্চুরি করেছিলেন জয়াবর্ধনে। বছরের শুরুতেই মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় (আরেক দল ভারত) ওয়ানডে সিরিজে সেঞ্চুরি পান জয়াবর্ধনে। মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির পর এপ্রিলে আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন। সে বছর একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে।
২০১৮ সালে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির দায়ে এক বছর নিষিদ্ধ হন ওয়ার্নার। পরের বছর ফিরেই রুদ্ররূপ ধারণ করেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। ২০১৯ সালের জুনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন ওয়ার্নার। বিশ্বকাপে করেন ৩টি সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটা করেন অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বছরের শেষ ভাগে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে করেন টানা দুই সেঞ্চুরি। এর মধ্যে ক্যারিয়ারসেরা ৩৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংসটিও আছে। ব্রায়ান লারার ৪০০*-এর কীর্তিকে ভালোভাবেই তাড়া করছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ার সে সময়ের অধিনায়ক টিম পেইন ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করলে ৩৩৫-এ থামতে হয় ওয়ার্নারকে।
স্বপ্নের উদ্বোধনী সঙ্গীর নাম জানালেন গিল
আর আইপিএল সেঞ্চুরি? সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আগেই করেছেন ওয়ার্নার। সে বছর ৩১ মার্চ প্রথম লেগে কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মুখোমুখি হয়েছিল ওয়ার্নারের হায়দরাবাদ। আগে ব্যাট করে হায়দরাবাদ গড়েছিল ২ উইকেটে ২৩১ রানের পাহাড়। সেদিন উদ্বোধনী সঙ্গী জনি বেয়ারস্টোর পর সেঞ্চুরি করেছিলেন ওয়ার্নারও।