দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন খাবার হোটেলে গতকাল শুক্রবার রাতে ভাতের দাম বাড়ানো নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক হোটেলমালিকের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জেরে আজ শনিবার সকাল থেকে সব খাবার হোটেল ও দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে দেড় ঘণ্টা ধরে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করায় কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে। তীব্র গরমে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গতকাল রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মিঠুন হোটেলে রাতের খাবার খান কয়েকজন ছাত্র। এ সময় মালিক প্রতি প্লেট ভাতের দাম ১৫ টাকা দাবি করেন হোটেলের মালিক মিঠুন বলেন, ৭০ টাকা কেজি চাল কিনে ১০ টাকা ভাতের প্লেট বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরও হোটেলের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। খাবার ফেলে দিয়েছে। প্লেট-গ্লাস ভেঙেছে।
এ ঘটনার জেরে আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন খাবার হোটেলগুলো বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তি পোহান শিক্ষার্থীরা। এরপর সকাল ১০টায় ওয়াজেদ ভবনের নিচতলায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন দোকান মালিক সমিতির নেতারা বৈঠকে বসেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মামুনুর রশিদ, ছাত্র উপদেষ্টা ইমরান পারভেজ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মূল্যতালিকা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত সব পণ্য আগের দামেই বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা। আর খাবারের হোটেলগুলো খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষ হওয়ার পরে বেলা সাড়ে ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের আবাসিক হল চারটি। ডাইনিং চালু আছে শুধু একটিতে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মেসে থাকেন। সকাল থেকে হোটেলসহ অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আশপাশের বাজারগুলোতে যে দামে জিনিসপত্র বিক্রি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকানগুলোতে কিনতে গেলে প্রতিটির দাম দুই-পাঁচ টাকা বেশি দিতে হয়।
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, একটি সাধারণ টিনশেড মেসে থাকতে গেলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। একটু ভালোমানের মেসে থাকতে হলে ৩ হাজার টাকা লাগে। মেয়েদের বেলায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া লাগে। এসব বিষয়ে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আরেক শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে আছি দোকানদারদের কাছে। প্রায় সময় বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দোকানমালিকেরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। আজকে অনেক শিক্ষার্থী সকাল থেকে না খেয়ে আছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটটি পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।’
প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় ঘটনাস্থলে যান দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ জিন্নাহ আল মামুন, কোতোয়াল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম ও প্রক্টর মামুনুর রশিদ।
বিশ্ববিদ্যালয় দোকান মালিক সমিতি সূত্র জানায়, মাছ মাংস, কাঁচাবাজার, স্টেশনারি, খাবার হোটেলসহ দুই শতাধিক দোকান রয়েছে। আজ বেলা ২টার পর থেকে দুই-একটি করে দোকানপাট ও হোটেল খোলা শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানি বলেন, কিছু কিছু শিক্ষার্থী আছে হোটেলে খাবার খেয়ে অর্ধেক দাম দিয়ে চলে যায়। আবার উল্টো টাকা নেওয়ার ঘটনাও আছে। প্রায় সময় এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গন্ডগোল হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করেও কোনো সুরাহা হয় না।
প্রক্টর মামুনুর রশিদ বলেছেন, বিষয়গুলো নিয়ে খুব দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনে ও সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেখানে মেস ভাড়া ও পণ্যসামগ্রীর মূল্যতালিকা নির্ধারণ করা হবে।