ডিপ মিড উইকেটের দিকে বল ঠেলে দিয়ে প্রচণ্ড দৌড়ে একবার প্রান্ত বদলেই অভিষেক শতক ছুঁয়ে ফেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এক রানকে দুই রান বানানোর সময় একবার বলের দিকে ফিরে তাকান। হেলমেট খুলতে খুলতে ছাড়িয়ে যান পপিং ক্রিজ। এক হাতে ব্যাট, অন্য হাতে হেলমেট নিয়ে শূন্যে লাফান দু’বার।
এরপর ব্যাটে আলতো করে চুমু খেয়ে, বুকে জড়ান সতীর্থ তাওহিদ হৃদয়কে। ড্রেসিংরুমের অভিনন্দন করতালি তখনও চলছিল। গ্যালারি থেকে শান্তর নামে স্লোগান তো ছিলই। ওয়ানডের অভিষেক সেঞ্চুরি করে প্রবাসে, প্রবাসীতে উষ্ণ অভিবাদন পেলেন শান্ত। এমন ‘নবাবি’ সেঞ্চুরিয়ানকে এরূপ অভিবাদনই দিতে হয়।
ক্রিকেটারদের জীবন বহতা নদীর মতো। কখনও সে স্রোতস্বিনী, কখনও খরায় চড়া। শান্তর খরা দেখে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে। এক দিনের ক্রিকেটে ১৫ ইনিংসে কোনো ফিফটি ছিল না। টি২০ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখায় সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কত রকম ব্যঙ্গের শিকার হচ্ছিলেন।
সেই চাপের দিনগুলোতে শান্তর মাথা ছিল বরফশীতল। তাঁর প্রতিজ্ঞা ছিল ব্যাটে সবকিছুর জবাব দেওয়ার। বিশ্বকাপটা দারুণ কেটেছে তাঁর। সাদা বলের শান্তর উত্থান বলতে গেলে টি২০ বিশ্বকাপ দিয়েই। সেই থেকে বাঁহাতি এ ব্যাটারের গল্পগুলো পারফরম্যান্সের রাংতায় মোড়ানো। বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে টপঅর্ডারে নিজেকে অপরিহার্য করে তোলেন।
পঞ্চাশ ওভারের খেলায় শান্তর জ্বলে ওঠা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে। ১৬তম ইনিংসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তাঁর। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের বিপক্ষে তিন ইনিংস খেলে দুই হাফ সেঞ্চুরি, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ছিল একটি ৫০ ছোঁয়া ইনিংস। সিলেটে ৭৩ রান করেছিলেন ৭৭ বলে। ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরি ছাড়া। চেমসফোর্ডের পরিত্যক্ত ম্যাচে ৪৪ রান করে আউট হলেও গতকাল ছিলেন দুর্নিবার। বোলারদের তুলাধুনা করে তুলে নেন সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশ ৩২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম উইকেট হারায় ৯ রানে। তামিম ইকবালের দ্রুত আউটে লিটন কুমার দাস আর নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে দায়িত্ব পড়ে ইনিংস গড়ে তোলার। লিটনও ২১ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে গেলে শান্ত হয়তো এগিয়েছিলেন নায়ক হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকে নিয়েও ইনিংস বড় করার সুযোগ পাননি।
শেষ পর্যন্ত তাওহিদ হৃদয়কে পেলেন যোগ্য সঙ্গী হিসেবে। ১০২ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন দু’জনে। শান্ত ৪৪ বলে ৬০, হৃদয় ৫৮ বলে ৬৮ রানের জোগান দেন জুটিতে। ক্রিকেটে নব্বইকে বলা হয় ‘নার্ভাস নাইনটি’। সেই বিপজ্জনক জোনে পৌঁছানোর পরে নড়বড়ে মনে হয়নি শান্তকে। যেটুকু মন্থর ছিলেন তা পরিস্থিতির কারণে। হৃদয় আক্রমণে যাওয়ায় তিনি একটু সময় নিয়ে মাইলফলকে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।
এবং তিনি পৌঁছালেন ৯৯ রান থেকে ‘ডাবল’ নিয়ে ১০১। ১১টি চার আর দুই ছক্কায় ৮৩ বলে তিন অঙ্কের রানে প্রথম পদার্পণ টপঅর্ডার এ ব্যাটারের। আর একটি চার ও ছয় মেরে ৯৩ বলে ১১৭ রানে আউট হলেন। ড্রেসিংরুমে যেতে যেতে একবার হতাশা নিয়ে তাকালেন ক্যাচ নেওয়া ফিল্ডার হেরি টেক্টরের দিকে। তাকাবেনই তো।
রাজসিক সেঞ্চুরির পরও যে আক্ষেপ করছেন শান্ত, ‘শুরুতে সেঞ্চুরি নিয়ে ভাবিনি। প্রোপার ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। জানতাম, খেলতে পারলে সেঞ্চুরি আসবে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, সেজন্য খুশি। তবে আমার মনে হয়েছে, আমি ম্যাচ শেষ করে আসতে পারতাম।’