খুচরা বাজারে চিনি কত টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে—এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সুপারিশ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানতে গড়িমসি করছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সচিবালয়ে আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং মজুত পরিস্থিতি’ শীর্ষক বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), শিল্প মন্ত্রণালয়, বিটিটিসি, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠকের বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘সুপারিশ মানতে আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি। চট্টগ্রাম বন্দরে এসে চিনি খালাসের অপেক্ষায় পড়ে থাকছে এবং এ কারণে তাঁরা লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন। লোকসানের প্রমাণ দেখাতে পারলে পরের বার যখন মূল্য সমন্বয় করা হবে, তখন তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
বিটিটিসির প্রতিবারের সুপারিশের পর অ্যাসোসিয়েশন বিজ্ঞপ্তি দিলেও এবার তিন দিন পরও তা দিচ্ছে না—এ তথ্য জানালে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘হ্যাঁ, এবার এখনো দেয়নি।’
বিটিটিসি গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হতে পারে বড়জোর ১২০ টাকা দরে। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হতে পারে প্রতি কেজি ১২৫ টাকা দরে।
বিটিটিসির এ সুপারিশ কার্যকর করতে একই দিন অ্যাসোসিয়েশনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিলেও তারা তা কার্যকর করছে না। এ কারণেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবার বৈঠকে বসে আজ।
সুপারিশ অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে খোলা চিনির খুচরা মূল্য ১২০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা এবং মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণের কথা উল্লেখ করা হয়। আর প্যাকেটজাত চিনির দরের কথা বলা হয় খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২১ টাকা এবং মিলগেট মূল্য ১১৯ টাকা।
তবে বাজারের চিত্র ভিন্ন। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যই বলছে, বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে।
বিটিটিসির সুপারিশ অনুযায়ী অ্যাসোসিয়েশন যখন খোলা ১০৪ টাকা ও প্যাকেটজাত ১০৯ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। বিজ্ঞপ্তির পর থেকে প্রতি কেজি চিনি ৩০ টাকা করে বেশি দিয়ে ভোক্তারা কিনে আসছেন বলে বাজার ঘুরে দেখা গেছে।
এখন যখন আগের আনুষ্ঠানিক দরের চেয়ে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৬ টাকা বেশি রাখার সুপারিশ করেছে বিটিটিসি, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা তা মানতে চাননি বলে জানা গেছে। এ সুপারিশ মানতে গেলে চিনির দাম বর্তমান বাজারদরের চেয়ে প্রতি কেজিতে কমাতে হবে ১৫ টাকা।
দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য ভিত্তিক গোষ্ঠী সিটি গ্রুপের চিনির ব্র্যান্ডের নাম তীর। গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহার কাছে আজ মোবাইলে আজ বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তবে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। দুই ঘণ্টা পর ফোন দেওয়া হলেও তিনি আর ধরেননি।
তবে বিটিটিসির মাধ্যমে নির্ধারণ করা মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রয় করা হচ্ছে কি না, তা আগামী সপ্তাহ থেকে তদারক করা হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সচিবালয়ে আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক বিষয়াবলিবিষয়ক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হেলেনা কনিগের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২৫ টাকা। ভোক্তাদের কাছে এ দরে বিক্রি করার জন্য সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশনসহ ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। তাঁরা এই মূল্যে বাজারে বিক্রি করছেন কি না, তা দেখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।