ভোগ্যপণ্যের বাজারে কারসাজি, অস্থিরতা

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

0
132

ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তির খবর নেই। আমদানি, পাইকারি, খুচরা তিন ধাপেই যে যার মতো বাড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও সরবরাহ কম থাকার ছুতায় ব্যবসায়ীরা দর বাড়ালেও তথ্য-উপাত্ত বলছে ভিন্ন কথা। সমকালের অনুসন্ধান বলছে, বিশ্ববাজার ও ডলারের দাম কিছুটা অস্থির থাকলেও এটিকে ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে। প্রশাসনকে চাপে রাখতে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে আমদানি; কমানো হয়েছে উৎপাদন। ঘাটতি তৈরি করা হয়েছে সরবরাহে।

দেশে এ বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে অপরিশোধিত সয়াবিন ১৩ শতাংশ বেশি এসেছে। চার মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে টনপ্রতি সয়াবিনের দামও কমেছে ১১০ থেকে ১১৫ ডলার। এ হিসাবে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। তবে দেশের বাজারের চিত্র পুরো উল্টো। এখানে সয়াবিনের দাম লিটারে বেড়েছে ১২ টাকা! চিনির ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। তবে সয়াবিনের চেয়ে এ বছরের প্রথম চার মাসে চিনি কিছুটা কম এসেছে। বিশ্ববাজারেও দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সবশেষ চার মাসে বিশ্ববাজারে চিনির দাম টনপ্রতি গড়ে বেড়েছে ৫৫ থেকে ৬০ ডলার। প্রতি ডলারের দাম ১০৬ থেকে ১০৭ টাকা ধরলে চিনির দাম কেজিপ্রতি বাড়ার কথা ছয় থেকে সাড়ে ছয় টাকা। তবে চিনি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে ব্যবসায়ীরা যেভাবে দাবি করছেন, ততটা দাম বাড়েনি। আবার কিছু পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমছেও।
আসলে সব ব্যবসায়ী নীতি ও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করছে না।

এ জন্য সব পণ্যের দাম এভাবে বাড়ছে।’
এস আলম, সিটি এবং টি কে গ্রুপের একাধিক পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গণমাধ্যমে স্বনামে বক্তব্য দিতে রাজি হননি তাঁরা। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি টন চিনি ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে সে হারে না বাড়ায় সংগঠনের সদস্যরা আমদানির সাহস পাচ্ছেন না।’ ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতিও এক বিবৃতিতে ভ্যাটের কারণে তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি  করেন। তবে চিটাগং চেম্বার ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববাজার ও দেশে ভোগ্যপণ্যের দামের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে কিছুটা অসামঞ্জস্য দেখা যায়। আমদানি, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় যাতে ঘাটতি তৈরি না হয়, সে জন্য নজর দিতে হবে প্রশাসনকে।’

স্বস্তি নেই খাতুনগঞ্জে
আমদানিকারকদের হাত ঘুরে পণ্য আসে পাইকারি বাজারে। সেখান থেকে কয়েক হাত ঘুরে তা যায় খুচরা বাজারে।  পণ্যের দাম বাড়লে তাই এক পক্ষ দোষ চাপায় অন্যের ঘাড়ে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, ‘চাহিদার অর্ধেক পণ্যও আসছে না পাইকারি মোকামে। যে দাম সরকার নির্ধারণ করে দিচ্ছে, সেই দামও মানছে না মিল মালিকরা। তাহলে কীভাবে কম দামে পণ্য বিক্রি হবে পাইকারি মোকামে?’ পণ্য সরবরাহের গোড়া ঠিক করা গেলে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ চিনির দাম বেড়েছে ৮০০ টাকা। ঈদের পর প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৯ টাকা এবং খোলা চিনি ১০৪ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এ দাম পাইকারি মোকামে বাস্তবায়িত হয়নি। খুচরা বাজারে এখন চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। একইভাবে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেলও। খাতুনগঞ্জে গতকাল মণপ্রতি পাম অয়েল ৫ হাজার ১০০ টাকায় ও সয়াবিন ৬ হাজার ৫০০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।

তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে, বেড়েছে দেশে
চার মাস ধরে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমলেও দেশে বৃহস্পতিবার থেকে লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন বোতলজাত প্রতি লিটার তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৯ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার সয়াবিন আমদানিতে যে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমদানিকারকদের ভ্যাট বাবদ যে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে, তা ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করতে দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ দেশে এ বছরের প্রথম চার মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার টন। আগের বছর একই সময়ে এসেছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার টন। এই হিসাবে আগের তুলনায় এখন ২৫ হাজার টন সয়াবিন বেশি এসেছে। শতাংশের হিসাবে যা ১৩ শতাংশের বেশি। আবার সর্বশেষ চার মাসে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দামও কমেছে ১১০ থেকে ১১৫ ডলার।

চিনি নিয়ে ছিনিমিনি
বিশ্ববাজারে চিনির দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। তবে বাড়তি দামের এ চিনি দেশে এসেছে খুব সামান্যই। তবু চিনির দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। গত চার মাসে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বাড়ার পরিমাণ সাকল্যে ছয় থেকে সাড়ে ছয় টাকা। তবে দেশে এ পণ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। তারপরও স্বাভাবিক নেই সরবরাহ ব্যবস্থা, চলছে অস্থিরতা। বাড়তি দামে বিশ্ববাজার থেকে চিনি কিনে এনে দেশে বিক্রি করা যাবে কিনা– সেই শঙ্কা থেকে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কমানো হয়েছে উৎপাদনও। এতে করে সরবরাহ ব্যবস্থায় তৈরি হয়েছে সংকট। এর প্রভাবে বাড়ছে চিনির দাম।

নেপথ্যে পাঁচ কারণ
ভোগ্যপণ্যের দামের ঘোড়া ছোটার পেছনে আছে পাঁচ কারণ। বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আবার দেশে ডলারের বাজারও অস্থিতিশীল। এলসি খুলতে ব্যাংকে এখনও বাধা হচ্ছে ডলার। ট্যাক্স ও ভ্যাটের প্রভাবেও কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তি বলে মনে করছে ব্যবসায়ীরা। আমদানি কমা ও দাম বাড়ার পেছনে তারা এই চার কারণকে সামনে আনলেও সবচেয়ে বড় কারণটি মনস্তাত্ত্বিক। তেল ও চিনির বাজার গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠান এ দুটি পণ্যের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই আমদানি করে। তেল ও চিনি আনতে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারার মতো প্রতিষ্ঠান দেশে আছে হাতে গোনা। তাই নিয়ন্ত্রণের চাবিও থাকছে তাদের হাতে। এরা চাইলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার এরা চাইলে সরবরাহে ঘাটতিও তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে রসুন, জিরা, আদাসহ মসলা আমদানিকারকদের মনেও। সামনে ঈদুল আজহা থাকায় তারাও নিচ্ছে দাম বাড়ানোর সুযোগ। পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে কিছু ভোক্তা একত্রে অত্যধিক পণ্য কিনতে চায়। এতে করে বাজারে বাড়তি একটি চাপ তৈরি হয়। যেটির সুযোগে পণ্যের দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পায় অসাধু ব্যবসায়ীরা।

বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে যারা

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মেঘনা, সিটি, এস আলম, টি কে, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করেছে। পাইপলাইনেও আছে তাদের প্রায় দুই লাখ টন তেল। আবার চিনিরও শীর্ষ আমদানিকারক হিসেবে আছে সিটি, মেঘনা ও এস আলম গ্রুপ। এর বাইরে চিনি আমদানিকারক হিসেবে আছে আব্দুল মোনেম ও দেশবন্ধু সুগার লিমিটেড। একই সময়ে এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আমদানি করেছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার চিনি ও চিনি তৈরির কাঁচামাল। পাইপলাইনে রয়েছে তাদের আরও প্রায় তিন লাখ টন চিনি। এ কারণে ঘুরেফিরে বড় গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণেই থাকছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যের বাজার।

চাপে রাখার কৌশল
তেল ও চিনির দাম বাড়ছে প্রতিযোগিতা করে। একই সময়ে এ দুটি পণ্যের দাম বাড়াতে তৎপরতা শুরু করেছে আমদানিকারক ও উৎপাদকরা। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন। এই চিঠিতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি টন চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে সে হারে না বাড়ায় সংগঠনের সদস্যরা চিনি আমদানির সাহস পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকারের দেওয়া ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল। এ পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহারের আগে প্রতি কেজি তেলে ভ্যাট দিতে হতো ৫ টাকা। এখন ভ্যাট দিতে হবে প্রায় ২০ টাকা। এ জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের।
এভাবে চিঠি ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরকারের ওপর আমদানিকারকরা পরোক্ষ একটি চাপ তৈরি করছে বলে মনে করেন ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার বিষয়টি বৈধ করতেই এমন চিঠি ও বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে আমদানিকারকদের সংগঠনগুলো। এটি করে তারা দাম বাড়ার বিষয়টি বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকার এ ফাঁদে পা দিয়েছে।’

মসলার বাজারও অস্থির
কোরবানির ঈদ ঘিরে নড়েচড়ে উঠছে খাতুনগঞ্জের মসলার বাজারও। জিরা, আদা, ধনিয়া, গোলমরিচ, দারুচিনি, তেজপাতার দাম কেজিতে বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। রোজার সময় ৩২০ টাকায় প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়। এখন এটির দাম ৭৩০ টাকা। সর্বশেষ এক সপ্তাহেই জিরার দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া ও ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রাখাকে কারণ বলছেন ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জে কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনিয়া ১৯৫ টাকা, কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গোলমরিচ ১ হাজার টাকা, কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৫৫০ টাকা, কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে তেজপাতা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদা, লবঙ্গ ও এলাচের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি লবঙ্গ ৩০০ টাকা ও এলাচ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ ২ হাজার ৬০০ টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা। ঈদের পরে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকাতে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুনের দামও পাইকারি মোকামে বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.