জনবল অনুমোদন হয়নি

0
141
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে রোগীদের ভিড়। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে

ছয় বছর আগে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে নতুন করে জনবল নিয়োগ হয়নি। ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলছে। ওই ১০০ শয্যার জনবলের অনেক পদ শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধেরও সংকট রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।

শহরের হাটির পাড়ে ১৯৬৮ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৭ সালে এটিকে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য চিকিৎসক প্রয়োজন ৫৮ জন। কিন্তু সেই অনুমোদন এখনো পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। সেখানেও রয়েছে জনবলসংকট। ১০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪৩টি। তবে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন ২৫ জন। ১০ জন সিনিয়র কনসালট্যান্টের মধ্যে শুধু একজন অ্যানেসথেসিস্ট আছেন, বাকি ৯টি পদই শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১২টি পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৭ জন।

স্টাফ নার্সের ১১টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৫ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির অনুমোদিত ১৬৯টি পদের মধ্যে ১৫টি, তৃতীয় শ্রেণীর ৫২টি পদের মধ্যে ৩৭টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৮টি পদের বিপরীতে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে।

এ সম্পর্কে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ছয় বছর আগে ২৫০ শয্যার অনুমোদন পেলেও ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হয়। আমরা জনবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার রোগী বহির্বিভাগে (আউটডোর) চিকিৎসা নেন। অন্তর্বিভাগে (ইনডোর) ৩০০-৩৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

শয্যাসংকট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, টিকিট কাউন্টারের স্বল্পতা নিয়ে অসন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। গত ২৯ এপ্রিল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ সারি। রোগী বেশি হলেও বহির্বিভাগের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন চারজন। অনেকে বিরক্ত হয়ে অনেকে বাইরের ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আবদুস সালাম (৪০) নামের এক রোগী বলেন, ‘দাঁতের সমস্যার কারণে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। টিকিটের সিরিয়াল পেতেই ২০ মিনিট সময় চলে গেল। এখানে দাঁতের একজন চিকিৎসক আছেন। দেখি সেখানে কতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লাগে। হাসপাতালে কাউন্টার সংখ্যা ও ডাক্তার আরও বাড়ানো দরকার।’

শয্যার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় অনেকে ওয়ার্ডের সামনে বিছানা পেতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সার্জারি ওয়ার্ডের এক রোগী বলেন, সারা দিনে মাত্র একবার ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়। দুপুরের পর কেউ ভর্তি হলে জরুরি বিভাগের ডাক্তারের চিকিৎসা ছাড়া সেদিনে আর কোনো ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না। যদি কোনো পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে হয়, তাহলে বাইরের ক্লিনিকে যেতে হবে, না হলে পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

কাঠালবাড়ি হরিশ্বর তালুক গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদের পরদিন আমার এক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। হাসপাতালের মেঝেতে ফেলে রাখা অপরিষ্কার বেডশিট তুলে এনে রোগীর বিছানা করে দেওয়া হয়েছিল। পরে অনেক অনুরোধে একটি পরিষ্কার বেডশিট পেয়েছিলাম। জনবলসংকটের দোহাই দিয়ে রোগীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। সকালে একবার ডাক্তার এসে দেখে যান। আর কেউ রোগীর খোঁজ নেন না।’

হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। উলিপুর হাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আঞ্জুমা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিনই দুপুর ও রাতে আলুর সঙ্গে পাঙাশ মাছ বা ব্রয়লার মুরগির মাংস দেওয়া হয়। মোটা চালের ভাত ও তরকারিতে মাছের আঁশটে গন্ধ। প্রথম এক দিন ভাত নিয়েছিলাম। পরদিন থেকে আর ভাত নিইনি।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এই কমসংখ্যক জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া চেষ্টা করে যাচ্ছি। মন্ত্রণালয়ে জনবলসংকটের কথা জানানো হয়েছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.