সরকার উন্নয়নের ঢাকঢোল বাজালেও নদী রক্ষায় উদ্যোগ নেই: বিএনপি

0
178
মির্জা ফখরুল ইসলাম

সরকার উন্নয়নের ঢাকঢোল বাজালেও দেশের নদীগুলো রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবে দেশের নদীগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যারা নদী দখল-দূষণ করছে, তারা সরকারঘনিষ্ঠ।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। ‘জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ ও নদী’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি না পেয়ে দেশের একটা অঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার একটা শব্দও বলছে না। একসময়ের প্রমত্ত বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায়, দুর্গন্ধে নদীর পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। এ সরকারের একটাই লক্ষ্য, ক্ষমতায় টিকে থাকা; দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার কোনো আগ্রহ তাদের নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তুরাগ নদের পাশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রশ্রয়ে-সহযোগিতায় নদের ওপরে ক্লাব গড়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিএনপি সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করেছিল, টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করেছিল। ফলে ঢাকার দূষণ কমেছিল। কিন্তু এখন এগুলোর গুরুত্ব না থাকায় ঢাকা এখন বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষকে টিকে থাকতে হলে, সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে হলে দেশে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র নেই বলেই সরকারের জবাবদিহি নেই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আন্তনদী নিয়ে যেসব সমস্যা, সেগুলো বিশ্বপরিমণ্ডলে তুলে ধরতে পারব।’

ভারতে সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের আলোচনা মাথা উঁচু করে দর-কষাকষি করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে নদীর ওপর অপরিকল্পিতভাবে সেতু ও শিল্পকারখানা করা হচ্ছে। অন্য কোনো দেশকে খুশি করার জন্য এসব করছি। এতে নদীর বিশাল ক্ষতি করছি।’

সেমিনারের প্রধান আলোচকের বক্তব্যে খন্দকার মোশররফ বলেন, আন্তর্জাতিক নদী থেকে ভারত পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশ নিজেদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে, জেনেশুনে বাংলাদেশকে নদীর পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে। তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করছে। দেশের জনগণের স্বার্থে নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর পানি প্রত্যাহার করায় নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বাঁচল কি মরল, সেটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। বছরে চারবার যৌথ নদী কমিশনের সভা হওয়ার কথা, কিন্তু বছরের পর বছর কোনো সভা হয় না। সরকারকে মেরুদণ্ড সোজা করতে হবে। পানির ন্যায্য হিস্যা গ্যারান্টি করে আদায় করতে হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত মওদুদ আহমেদের সহধর্মিণী হাসনা জসীমউদ্দীন মওদুদ। তিনি বলেন, ভারত তিস্তা নদী থেকে আরও পানি সরাতে দুটি নতুন খাল খনন এবং একটি উপনদীতে দুটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে। এতে বাংলাদেশের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তিস্তা নদীর তলদেশ শুকিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে। পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।

গবেষণা ও পরামর্শ সেবা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর নদীমাতৃক রয়েছে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন। ডাইং কারখানার কারণে মেঘনা, বুড়িগঙ্গা নদী চরম দূষিত। সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ সুন্দরবন ধ্বংস হোক—এমন কোনো প্রকল্প নেবে না, কিন্তু এই সরকার অপরিকল্পিত প্রকল্প নিয়েছে। একদিকে নিজেরা পরিবেশ দূষণ করব, আবার নিজেদের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত বলব, এটা একসঙ্গে যায় না।’

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর নিচে তাকালে শুধু বালুচর দেখা যায়। ৮ থেকে ১০ বছর পরে নদীতে পানিপ্রবাহ থাকবে কি না, সেটি প্রশ্ন। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী তেল ও কয়লাবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা এখনো ঘটছে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.