সকালের ভূমিকম্পটি কী বার্তা দিচ্ছে

0
137
অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল

ঢাকার আশপাশে কিছু ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি বা ফাটল আছে। ছোট ও সরু নদী বা খাল এসব চ্যুতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এমন একটি চ্যুতি থেকেই আজ শুক্রবার সকালে ভূমিকম্প হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে এসব কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ সময় আজ ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পনটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। ভূমিকম্পনটির উৎপত্তিস্থল ঢাকার দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পনটির উৎপত্তিস্থল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) মাকসুদ কামাল বলেন, দোহার ও তার আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছোট নদী আছে। সেখানে চ্যুতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত কিছু নদী আছে। এমন চ্যুতিগুলো দিয়ে ছোট ভূমিকম্প হতে পারে। ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায় এই ধরনের ভূমিকম্পের প্রক্রিয়াকে ‘নিওটেকটনিক’ বলা হয়।

সাতসকালে ভূমিকম্পে কাঁপল ঢাকা, উৎপত্তিস্থল দোহার

বাংলাদেশ সময় আজ শুক্রবার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়
বাংলাদেশ সময় আজ শুক্রবার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়ছবি: ইউএসজিএসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের শিক্ষক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এই নিওটেকটনিক প্রক্রিয়ার অংশ আজ সকালের ভূমিকম্প। সাধারণত, নিওটেকটনিক চ্যুতি থেকে বড় ভূমিকম্প হয় না। যেমনটা আজ সকালে হয়েছে।’

ইছামতী নদী বা তার কোনো শাখা নদী কিংবা খাল আজকের ভূমিকম্পের উৎসস্থল হতে পারে বলে ধারণা করছেন মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, আজ সকালের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। অর্থাৎ, উৎসটি অগভীর (শ্যালো)। নিওটেকটনিক চ্যুতি–নিয়ন্ত্রিত অগভীর উৎস থেকেও সচরাচর বড় ভূমিকম্প হয় না।

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমার গবেষণা অনুযায়ী, আজকের ভূমিকম্পটি নিয়ে বার্তা হলো—এমন ভূমিকম্প দেশে আগেও হয়েছে। নদীপথ নিয়ন্ত্রণ করে যে ফাটলরেখা, তা দিয়ে যখন ভূমিকম্প হয়, সেই ভূমিকম্প বড় হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।’

ভূমিকম্প হলে কী করবেন, কী করবেন না

আজ শুক্রবার সকালের ভূমিকম্পনটির উৎপত্তিস্থল ঢাকার দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে
আজ শুক্রবার সকালের ভূমিকম্পনটির উৎপত্তিস্থল ঢাকার দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বেছবি: ইউএসজিএসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

মাকসুদ কামাল বলেন, এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত দুটি বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে। তার একটি হয় ১৯১৮ সালে, শ্রীমঙ্গলে। আরেকটি হয় ১৮৮৫ সালে, ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জে। এটিকে ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’ বলা হয়। আর ছোট ভূমিকম্প অনেকগুলো হয়েছে। আজকেরটাও ছোট ভূমিকম্প।

বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা সব কটি এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশও

আবহাওয়া অধিদপ্তর বাংলাদেশকে ভূকম্পনের তিনটি জোনে ভাগ করেছেছবি: আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

রাজধানী ঢাকাও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সমীক্ষাটি চার বছর (২০১৮ থেকে ২০২২ সাল) ধরে করা হয়।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, টাঙ্গাইলের মধুপুরে মাটির নিচে চ্যুতিরেখা বা ফল্টলাইন রয়েছে। সেখানে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন ধসে পড়বে। অন্যদিকে, সিলেটের ডাউকি চ্যুতিরেখায় ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫টি ভবন ধসে পড়বে।

বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি

আবহাওয়া অধিদপ্তর বাংলাদেশকে ভূকম্পনের তিনটি জোনে ভাগ করেছে। এগুলো হলো—উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (লাল চিহ্নিত), মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ (গোলাপি চিহ্নিত) ও কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা (হলুদ চিহ্নিত)।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া রংপুর, ঢাকা, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ এই জোনে পড়েছে। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশবিশেষসহ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা। ভূমিকম্পের কম ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.