দাঁড়ালে দুয়ারে: মন ছুয়ে যাওয়া গানের কথা

0
372
মুকুল মজুমদার ইশান

আমার প্রতিটি বিষয়ে আমার মা খুব সচেতন। খুঁতখুঁতেও। পারফেক্ট না হলে বলেন, এটা এমন হতে পারত, ওটা এমন করে করতে পারতে। কখনো মা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেন না। তবে এবারের গানটি শুনে–দেখে মা কান্না করে দিয়েছেন। খুশিতে। বলেছেন, ভালো কাজ করেছি।’

কথাগুলো বলার সময় নন্দিতার গলার স্বর কাঁপছিল। নন্দিতার এই যে ‘ভালো কাজ’, মাকে খুশি করে তোলার কাজটি হলো কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় মৌসুমের ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গান। গত ২১ এপ্রিল, চাঁদরাতে গানটি অবমুক্ত করা হয় কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে।

মেয়ের এত সুন্দর পরিবেশনা দেখে খুশিতে অশ্রুসজল হয়েছেন কণ্ঠশিল্পী নন্দিতার মা, আর গানের মধ্যে ডুবে গিয়ে ডুকরে কেঁদেছেন অনেক দর্শক-শ্রোতা। তাঁদের মতে, এত আবেগ, এত মন ছুঁয়ে যাওয়া গান খুব কমই আছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের মনের ভেতরের খোঁজ, আকুলতা কী সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন…।

‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানটি গেয়েছেন শিল্পী মুকুল মজুমদার ইশান ও সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা। গানটি নিয়ে নন্দিতার প্রাপ্তির কথা তো জানলাম। ইশানের কাছে জানতে চাই তাঁর প্রাপ্তি ও অনুভূতির কথা। লাজুক হেসে ইশান বলেন, ‘এত সুন্দর একটি গানে আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি কোক স্টুডিও বাংলার কাছে কৃতজ্ঞ। গান তো আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে গেয়েছি। এরপর পরিচিতজন এবং দর্শক-শ্রোতারা যেভাবে গানটিকে এত পছন্দ করলেন—আমি রীতিমতো বিস্মিত। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এসব অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো যায় না।’

নন্দিতা এর আগেও কোক স্টুডিও বাংলার গান গেয়েছেন
নন্দিতা এর আগেও কোক স্টুডিও বাংলার গান গেয়েছেন

দাঁড়ালে দুয়ারে গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য কীভাবে নির্বাচিত হলেন? ইশান বলেন, ‘রুবায়েত আপু একদিন মেসেঞ্জারে নক করে জানালেন, সংগীতশিল্পী অর্ণব ভাই দেখা করতে চাইছেন আমার সঙ্গে। ওনার সঙ্গে দেখা করার পর তখনই আমাকে গাইতে বলা হলো। আমি দুরুদুরু বুকে অর্ণব ভাই এবং দলের সবাইকে গান শোনালাম। এরপর একদিন শুভেন্দু দাস দাদা ফোন করে আমাকে নির্বাচিত করার বিষয়টি জানান। তারপর আমরা গানের ডেমোর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।’

কোক স্টুডিও বাংলার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইশান বলেন, ‘এককথায় অসাধারণ। নিজের পছন্দের মিউজিশিয়ানদের সামনাসামনি দেখার সুযোগ পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছিল, পাশাপাশি ভয়ও পাচ্ছিলাম। এত এত গুণী মানুষের সান্নিধ্য পাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। কোক স্টুডিও বাংলার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষের আন্তরিকতা এবং কাজের ধরনই গানগুলোকে এতটা প্রাণবন্ত করে তোলে।’

‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানটি গেয়েছেন শিল্পী মুকুল মজুমদার ইশান ও সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা
২১ এপ্রিল গানটি অবমুক্ত করা হয় কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে

নন্দিতা এর আগেও কোক স্টুডিও বাংলার গান গেয়েছেন। এবার কীভাবে যুক্ত হলেন এই গানটির সঙ্গে? জানতে চাইলে নন্দিতা বলেন, ‘শুভেন্দুদা একদিন ফোন করে বললেন ‘‘যত দেখি তত হায় পিপাসা বাড়িয়া যায়…’’ অংশটুকু গাওয়ার জন্য। এরপর অর্ণবদাও শুনলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাকে এই গানের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। এর আগে এই গানটি যতজন শিল্পী গেয়েছেন, প্রত্যেকের গান আমি শুনেছি। তাদের কাছ থেকে সবটুকু ধারণ করে নিজের মতো করে গেয়েছি। তবে যতক্ষণ প্রস্তুতি নিয়েছি, আমি এই গানটিকে পুরোপুরি ধ্যানজ্ঞান করে নিয়েছিলাম।’

শ্রোতা–দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নন্দিতা জানান, ‘চাঁদরাতে গানটি প্রকাশিত হয়। দেশের পরিচিত-অপরিচিত অনেকের পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকেও কয়েকজন আমার সঙ্গে গানের বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা এই গানে মুগ্ধ। দর্শক-শ্রোতাদের মতে, অনেক দিন প্রকৃতিতে এত গরম ছিল যে ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানটি তাঁদের মনে-প্রাণে অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে। সবার কাছ থেকে এমন প্রশংসা শুনলে অজান্তেই মনে প্রশান্তি চলে আসে।’

২১ এপ্রিল, চাঁদরাতে গানটি অবমুক্ত করা হয় কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে
২১ এপ্রিল, চাঁদরাতে গানটি অবমুক্ত করা হয় কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে

উল্লেখ্য, নন্দিতা এবং ইশানের সঙ্গে ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানটিতে আরও কণ্ঠ দিয়েছেন সুনিধি নায়েক, রুবায়েত রেহমান ও জান্নাতুল ফিরদৌস আকবর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.