নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষর জাল করে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন

0
143
ভুয়া সুপারিশ

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সুপারিশের ভিত্তিতে একজন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য সংশোধন করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে, আবদুল লতিফ সরদার বাবু ওরফে শেখ সুমন নামের এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষর, সিল ও হস্তলিপি নকল করে ভুয়া সুপারিশ বানান। এ ঘটনায় আবদুল লতিফ সরদারকে আসামি করে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় গত ২৬ এপ্রিল মামলা করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) আরাফাত আরা।

এ নিয়ে আরাফাত আরা বলেন, নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সুপারিশনামা বানানোর ঘটনাটি জানার পরপরই নির্বাচন কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে আবদুল লতিফের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

যোগাযোগ করা হলে শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সুপারিশ বানানোর প্রক্রিয়ায় জড়িত আবদুল লতিফকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আর এই জাল কাগজপত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম।

আসামি আবদুল লতিফ সরদারের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

আবদুল লতিফের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে লতিফের বাবা খতব উদ্দিন সরদার বলেন, ‘আমার ছেলে লতিফের সঙ্গে ১৮ থেকে ২০ বছর কোনো যোগাযোগ নেই। আমার ছেলে ঢাকায় কী করে, তা জানি না।’

স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সুপারিশে এনআইডির তথ্য সংশোধিত
মামলার কাগজপত্র ও নির্বাচন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত ১ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে ইকবাল হোসেন, মেহেবুবুল আলম, সেলিনা আক্তার, মমতাজ আরা বেগম ও ইমন হোসেন নামের পাঁচজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সুপারিশ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ইকবাল হোসেনের জাল সুপারিশ জমা দেওয়া হয় কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসে। পরে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্মতারিখ সংশোধিত হয়। আগের জাতীয় পরিচয়পত্রে ইকবাল হোসেনের জন্মতারিখ ছিল ১৯৯৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। তবে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর জন্মতারিখ দেখানো হয় ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট। অবশ্য বাকি চারজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো তথ্য সংশোধিত হয়নি।

বিষয়টি নজরে আসার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ২০ মার্চ নির্বাচন কমিশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। নির্বাচন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, তদন্ত কমিটি মামলার আসামি আবদুল লতিফ সরদারসহ সংশ্লিষ্ট সবার জবানবন্দি গ্রহণ করে। ভুয়া সুপারিশের ভিত্তিতে যে ইকবালের এনআইডির তথ্য সংশোধিত হয়েছে, তিনি ইতালিপ্রবাসী। অবশ্য নির্বাচন কমিশন ইকবালের বাবা শহীদ মিয়ার বক্তব্য শোনেন। শহীদ মিয়া দাবি করেছেন, তাঁর ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে পাসপোর্টের বয়সে গরমিল ছিল। পরে কম্পিউটার দোকানদার পলাশের মাধ্যমে তাঁর ছেলে পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করেন। এ তথ্য সংশোধনের জন্য মো. পলাশ তাঁর কাছ থেকে ৮৪ হাজার টাকা আদায়ও করেন।

যোগাযোগ করা হলে মো. পলাশ মুঠোফোনে বলেন, ইতালিপ্রবাসী ইকবাল সম্পর্কে তাঁর আত্মীয়। তাঁর জন্মতারিখের তথ্য সংশোধনের জন্য তিনি প্রথমে রুবেল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে আবদুল লতিফ সরদার ওরফে শেখ সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সুমন নিজেকে নির্বাচন কমিশনে কাজ করেন বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনিই নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান স্যারের সুপারিশসংবলিত একটি কাগজ তাঁর হাতে জমা দেন। বিনিময়ে তিনি সুমনকে টাকা দেন ৫৯ হাজার টাকা। পরে আসামি আবদুল লতিফ সরদারের বক্তব্য শোনে নির্বাচন কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটি। সেখানে আবদুল লতিফ দাবি করেন, তিনি নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষর জাল করে কোনো ভুয়া সুপারিশনামা তৈরি করেননি। তবে ইকবাল হোসেনের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনে সুপারিশনামাটি তাঁকে দিয়েছিলেন কামরুল নামের এক ব্যক্তি; তিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মরত একজন পিয়ন। পরে কমিটি কামরুলের বক্তব্য নেন।

সবার বক্তব্য গ্রহণ শেষে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সুপারিশনামা তৈরিতে আবদুল লতিফ সরাসরি জড়িত। তবে লতিফের সহযোগী কে বা কারা, তা তদন্তে প্রমাণিত হয়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষর জাল করে পাঁচটি ভুয়া সুপারিশ কার হাতের লেখা, সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.