তদন্তের ভয়েই কি চাকরি ছাড়ছেন পল স্মলি

0
123
কাজী সালাউদ্দিন।

নিষিদ্ধ সোহাগের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন এই বাফুফে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর

ঈদের পর বাফুফেতে প্রথম কোনো জরুরি সভা। মঙ্গলবার কার্যনির্বাহী কমিটির বেশিরভাগ সদস্যের উপস্থিতিতে বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া মিটিংটি শেষ হয় আড়াই ঘণ্টা পর। দীর্ঘ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনটি যতটা উত্তপ্ত হবে বলে মনে করা হয়েছিল, হয়েছে তার ঠিক উল্টো। আলোচ্য বিষয়গুলো একে একে বলে যান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতেও হয়নি তাঁকে।

নিরুত্তাপ সংবাদ সম্মেলনের পর নিজ কক্ষে সালাউদ্দিন শোনালেন গরম খবর, ‘পল স্মলি (বাফুফে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর) আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর থাকছেন না।’

দরপত্রে অনিয়ম এবং ফিফা ফান্ডের অপব্যবহারে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার পর স্মলির চাকরি ছাড়ার সংবাদটি ফুটবল অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর সঙ্গে অনেক প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। সোহাগ ইস্যুতে বাফুফে যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তারা এখনও কাজ শুরু করেনি। এর আগেই পল স্মলির পদত্যাগে অন্য কিছুর আভাস মিলেছে ফুটবলপাড়ায়।

নিষিদ্ধ সোহাগের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন পল স্মলি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে পথচলা শুরু হলেও ২০১৯ সালে তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাফুফে ছেড়ে পল চাকরি নিয়েছিলেন ব্রুনাইয়ে। ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের কথা বলে ২০২০ সালে চার বছরের জন্য তাঁকে আবার নিয়ে আসে বাফুফে। চুক্তি অনুযায়ী তাঁর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। কিন্তু এর আগেই পলের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে কানাঘুষা।

ফিফা থেকে নিষিদ্ধ সোহাগের সঙ্গীদের দুর্নীতি খুঁজে বের করতে বাফুফে যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, সেখানে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন পল স্মলিও। বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের সাফল্যের জন্য পল স্মলিকে কৃতিত্ব দিয়েছেন ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। এটা ঠিক তাঁর হাতে ধরে বদলে গেছে মেয়েদের ফুটবল; কিন্তু ফুটবলের উন্নয়নের জন্য ফিফা এবং এএফসি থেকে যে ফান্ড পায় বাফুফে, তার ব্যয়ের খাত নাকি স্মলি নির্ধারণ করেন।

প্রায় সময়ই নানা আলোচনা হয়েছে এ অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে। নানা সময়ই রটেছে ফিফা এবং এএফসি থেকে বাফুফেকে অর্থ এনে দিতেন স্মলি, সেই জন্য নিজে যেমন কমিশন পেতেন, পকেট ভারী হতো সোহাগসহ আরও অনেকের। তদন্ত কমিটির সামনে যেন পড়তে না হয়, সেই কারণেই হয়তো চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন স্মলি।

বাফুফে সভাপতির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতেন বলে এ অস্ট্রেলিয়ান ক্ষমতার দাপটও দেখাতেন। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন। বাফুফে থেকে প্রতি মাসে ১৫-১৬ লাখ টাকা বেতন পেতেন স্মলি। অথচ বাফুফে সভাপতির কাছে তিনি নাকি বলেছেন এখানে কাজ করার পরিবেশ নেই। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেননি পল স্মলি। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপে সেরা হয়ে মেয়েরা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরলেও স্মলি চলে যান ছুটিতে। ১৪ মে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফেরার পরই হয়তো বাফুফেতে পদত্যাগপত্র জমা দিবেন।

শুধু পল স্মলিই নন, সোহাগের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা বাফুফের আরও কয়েক কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হবে। তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে বির্তকিত ওই স্টাফদের নিজেদের কাজ থেকে দূরে রাখা হবে বলে ইঙ্গিত দেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বাফুফে সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, ‘যাঁদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, প্রয়োজন হলে তাঁদের আমরা কাজ থেকে দূরে রাখব। তবে সবকিছু আমরা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিব।’

১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি থেকে দুই সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহি পদত্যাগ করায় বাকি আট সদস্য মিলে করবেন তদন্ত। গত ১৭ এপ্রিল কমিটির নাম ঘোষণা করা হলেও কাজ শুরু করেনি তদন্ত কমিটি। আগামী সপ্তাহে সভা করে নিজেদের করণীয় ঠিক করবে কমিটি। এরপর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে তদন্ত কমিটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.