ডলার-সংকটের মধ্যে ঈদের মাসে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় কম এসেছে। গত এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। গত বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। ফলে এক বছরে আগের তুলনায় গত মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। প্রবাসী আয়-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য মিলেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত ঈদের আগে ভালো পরিমাণে প্রবাসী আয় বাংলাদেশে আসে। এ সময় প্রবাসীরা পরিবারের সদস্যদের ঈদের বাড়তি খরচ জোগাতে বেশি পরিমাণ আয় দেশে পাঠিয়ে থাকেন। অনেক প্রবাসী জাকাত ও ফিতরার টাকাও দেশে পাঠান। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম আটকে রাখার কারণে এবার বৈধ পথে আয় কম এসেছে।
ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ প্রতি ডলার ১০৮ টাকা দরে প্রবাসী আয় কিনতে পারছে, যা কার্যকর হয়েছে ১ মে থেকে। ঈদের মাসেও প্রবাসী আয় কম আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়িয়েছে। এর আগে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ছিল ১০৭ টাকা।
জানা গেছে, হুন্ডিতে ডলারের দাম পাওয়া যায় প্রায় ১১০ টাকা। বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে প্রতি ডলারে ব্যাংকগুলো বেশি টাকা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। এই কারণে ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে আয় আনতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুরো এপ্রিল মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫৫ লাখ মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে বৈধ পথে ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় বাংলাদেশে আসে, যা ফেব্রুয়ারির আয়ের চেয়ে ৪৬ কোটি ডলার বেশি। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি ডলার। সেটি আবার জানুয়ারির তুলনায় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিল। জানুয়ারিতে প্রায় ১৯৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরপরও ব্যাংকের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় আশানুরূপ বাড়ছে না। এমন প্রবণতাও দেখা গেছে যে এক মাসে প্রবাসী আয় বাড়ছে তো আরেক মাসে কমছে। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়ে কিছুটা গতি এলেও ফেব্রুয়ারিতে কমে যায়। পরের মাসেই; অর্থাৎ মার্চে আবার ভালো অবস্থা দেখা গেছে প্রবাসী আয়ে। এপ্রিলে আবার যা কমেছে।
বাংলাদেশে গত বছরের মার্চ মাস থেকে ডলার-সংকট চলছে। এখন ধীরে ধীরে এই মুদ্রার দাম বাড়ানো হচ্ছে, যাতে আরও বেশি ডলার দেশে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের ডলার বিক্রিতে ডলারের দাম ১০৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা করেছে। রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম এখন ১০৬ টাকা। আর আমদানিতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখন ১০৭ টাকা। তবে অনেক ব্যবসায়ীকে ১১০ টাকার বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।