ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় প্রচলিত গণমাধ্যমের বিদ্যমান ধারা ভবিষ্যতে সম্পূর্ণরূপে বদলে যাবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে আগামী দিনগুলোতে কাগজের পত্রিকা থেকে তথ্য খুঁজে নেওয়ার অবস্থা বিরাজ করবে না। ইতোমধ্যেই প্রতি মুহূর্তেই সংবাদ আপডেটের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই পাঠকের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠছে। এক সময়কার অডিও, প্রিন্ট ও টিভিভিত্তিক গণমাধ্যম এখন ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তার লাভ করছে। আর এই অবস্থা শুধু সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যই নয়, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রয়াত স্মরণীয়-বরণীয় সাংবাদিক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি-ঢাকার সভাপতি মোল্লা জালালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, সাবেক সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, কুদ্দুস আফ্রাদ, সাংবাদিক ফায়জুস সালেহীন, ইউসুফ শরীফ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয় হাকিম।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী স্বাধীনতার পর সাংবাদিকতার রূপান্তর ঘটেছে উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের সম্মান করতেন। তিনি দেশে সাংবাদিকতার বিকাশে অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতাপরবর্তী সাংবাদিকদের মধ্যে মত ও পথের ভিন্নতা থাকলেও সাংবাদিকতার স্বার্থে সবাই ছিলেন আপসহীন।
অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফা জব্বার বলেন, স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন পাঁচ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবে তরুণ সাংবাদিকদের প্রবেশ একপ্রকার নিষিদ্ধ ছিল। আমরা সেই নিয়ম পরিবর্তনে বাধ্য করি। নতুন গঠনতন্ত্র তৈরি করে তরুণ সাংবাদিকদের প্রেস ক্লাবকে ঠিকানা সৃষ্টি করতে সমর্থ হই।
তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের মাটিই কেবল উর্বর নয়, সাংবাদিকতা, শিল্প-সাহিত্যে এই অঞ্চলের মানুষের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কাদামাটি মেখে রাজধানীতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে আমি নিজেও এই জাতির জন্য কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
মন্ত্রী সাংবাদিক হিসেবে প্রয়াত আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমেদ, মুজীবুর রহমান খাঁ, খোন্দকার আবদুল হামিদ, সৈয়দ নুরুদ্দীন, হাসান হাফিজুর রহমান, মীর নুরুল ইসলাম, আতাউস সামাদ, রাহাত খান, আসাফ উদ্দৌলা, বজলুর রহমান, ফকির আশরাফ, রফিক আজাদ, শফিউল হক প্রমুখের অবদান তুলে ধরেন। তিনি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের নিজেদের প্রতিভার বিকাশে তাদের জীবনী ও লেখনী অধ্যয়ন করার আহ্বান জানান।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাংবাদিকদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছেন আবুল মনসুর আহমেদ, হাসান হাফিজুর রহমান, রাহাত খান, রফিক আজাদের মতো দেশবরেণ্য সাংবাদিক।
সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতা ও সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান যুগ প্রচার-প্রসারের যুগ। আর এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন সাংবাদিকগণ। প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকগণ মূলধারার সংবাদের পাশাপাশি দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সংবাদও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করবেন।
কে এম খালিদ বলেন, ১৭৮৭ সালের ১মে ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহ শহর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১১ সালে আর এ শহরের জন্য জায়গা দেন আমার নির্বাচনী এলাকা মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য। তা ছাড়া মুক্তাগাছার জমিদাররা আনন্দ মোহন কলেজসহ ময়মনসিংহ শহরের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। সে বিবেচনায় প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ময়মনসিংহের সঙ্গে মুক্তাগাছার রয়েছে নিবিড় ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
অসীম কুমার উকিল দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় তার সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, সাংবাদিকতা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রয়াতদের নীতি আদর্শে নিজেদের তৈরি করতে পারলে জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিকদের অসাধারণ অবদান রাখার সুযোগ আছে।
সভাপতির বক্তৃতায় মোল্লা জালাল বলেন, ব্রিটিশ ভারতের গোটা বাংলায় সাংবাদিকতার বিকাশ ও প্রতিষ্ঠায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বলেন, শিল্প-সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ সৃজনশীলতার এক উর্বর জনপদ।
পরে কেক কেটে ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠার ২৩৬তম বার্ষিকী উদযাপন করা হয়।