নামটা পরিচিতি পেয়েছিল বছরখানেক আগে। গত মৌসুমে আইপিএলের নিলামে সিঙ্গাপুরের খেলোয়াড় হিসেবে বিক্রি হয়েছিলেন ৮ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সবচেয়ে দামি বিদেশি ক্রিকেটার হয়েছিলেন এই টিম ডেভিড। কেউ কেউ অবাক হয়েছিলেন, সিঙ্গাপুরের এক অখ্যাত ক্রিকেটার কীভাবে এত দামে বিক্রি হন!
তবে অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ডেভিড কিন্তু তার আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় মারদাঙ্গা ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম কামিয়েছেন। জন্ম তাঁর সিঙ্গাপুরে হলেও ডেভিডের বেড়ে ওঠাটা অস্ট্রেলিয়াতেই। বাবা রড ডেভিড ১৯৯৭ সালে সিঙ্গাপুরের হয়ে খেলেছিলেন আইসিসি ট্রফিতে। এই সিঙ্গাপুরেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি ডেভিডের। ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও ডেভিড অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে খুব বেশি সময় নেননি। সিঙ্গাপুরের হয়ে খেলেছেন ১৪টি টি–টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গত বছর সেপ্টেম্বরে ডেভিড নাম লেখান অস্ট্রেলিয়া দলে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ১১টি টি–টোয়েন্টি। খেলেছেন গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।
আইপিএলে মুম্বাইয়ের সবচেয়ে দামি বিদেশি ক্রিকেটার, কিন্তু দাম অনুযায়ী ডেভিডের ব্যাটে ধারাবাহিকতা ছিল না। একটা দারুণ ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলেন। কাল রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে সেই সুযোগটিই পেয়ে গেলেন। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে ঝলসে উঠল তাঁর ব্যাট। ৩২১.৪২ স্ট্রাইক রেটে খেললেন অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। ১৪ বলে তাঁর ৪৫ রানের ইনিংসে ছিল ২টি চার আর ৫ ছক্কা। বিশেষ করে শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন মুম্বাইয়ের দরকার ১৭ রান, তখন ডেভিড হোল্ডারের প্রথম তিন বলে টানা তিন ছক্কা মেরে দলকে জয় এনে দেন। অনেক দিন ধরেই এমন একটা ইনিংস খেলতে চেয়েছিলেন ডেভিড।
কাল ম্যাচ শেষে ডেভিড বলেছেন সে কথাই, ‘আমি অনেক দিন ধরেই এমন একটা ইনিংস খেলার অপেক্ষায় ছিলাম। শেষ ওভারে আমি একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে খেলতে চেয়েছি। চেয়েছি বলের অ্যাঙ্গেল কমিয়ে আনতে আর শট খেলতে। শেষের দিকে ব্যাটিং করার মজাই আলাদা। এমন জয়ের অনুভূতিটা সত্যিই অনন্য।’
ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলকে জয় এনে দেওয়াই ডেভিডের কাছে বড়, ‘আমাদের দল জয়ের চেষ্টা করছিল। দর্শকেরা আমাদের জন্য উন্মাতাল হয়ে গিয়েছিল। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এই অনুভূতিটা সত্যিই দারুণ।’
২০২০–২১ মৌসুমে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ডেভিডের। সেটি অস্ট্রেলিয়ার বিগব্যাশে হোবার্ট হারিকেনসের হয়ে। নিজের প্রথম ম্যাচেই করেছিলেন ফিফটি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। প্রথম মৌসুমেই নিয়মিত খেলে ১৪ ম্যাচে ২৭৯ রান করেছিলেন ডেভিড।
এরপর খেলেছেন পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পিএসএলে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে। ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন সেন্ট লুসিয়া কিংসে। ইংল্যান্ডেও খেলেছেন টি–টোয়েন্টি ব্লাস্টে—সারের হয়ে। এরপর নাম লিখিয়েছেন ‘দ্য হানড্রেডস’ টুর্নামেন্টে, সাউদার্ন ব্রেভ দলের হয়ে। আইপিএলে অভিষেক ২০২১ সালে। সেটি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। ফিন অ্যালেনের বদলি হিসেবে খেলেছিলেন। তবে একটির বেশি ম্যাচ খেলেননি।
২০২২ আইপিএলের নিলামে বাজিমাত করেন ডেভিড। সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে পেছনে ফেলে তাঁকে ৮ কোটি ২৫ লাখ রুপি দিয়ে কিনে নেয় মুম্বাই। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি এ মুহূর্তে অন্যতম বিধ্বংসী ক্রিকেটার। মুম্বাই যে তাঁকে কিনে ভুল করেনি, সেটির প্রমাণ তিনি রাখলেন কাল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামকে মাতাল করে দিয়ে।