নর্দমা প্রশস্তকরণের জন্যও সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়কেই রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। এতে মূল সড়ক সরু হয়েছে।
পানি সরবরাহের পাইপ বসানোর জন্য সিলেট কাজীটুলা এলাকার মূল সড়কের এক পাশ খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে পাইপ বসানোর কাজ শেষ করে গর্তে মাটি, বালু, পাথর ফেলে ভরাট করা হয়। কিন্তু সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি। একই অবস্থা কাজী জালালউদ্দিন ও মক্তবগলি এলাকারও। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা লোহারপাড়া এলাকার। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নানা দুর্ভোগে অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা।
এ চার এলাকা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ডটিতে আরও আছে উত্তর কাজীটুলা, মীরবক্সটুলা, পশ্চিম শাহী ঈদগাহ, ইনছান শাহ গলি, চন্দনটুলা, আম্বরখানা (আংশিক), চৌহাট্টা (আংশিক), কাজীটুলা উঁচাসড়ক, মহল্লে আবদুল্লাহ ও নয়াসড়ক এলাকা।
লোহারপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমদ বলেন, পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে এলাকার সড়কটি পানির পাইপ বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। কাজ শেষ হলেও তা মেরামত করা হয়নি। একই এলাকায় নর্দমা প্রশস্তকরণের জন্যও সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়কেই রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। এতে মূল সড়ক সরু হয়েছে। এতে প্রতিদিনই যানজট হয়। হাঁটাচলা করতেও পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ধুলা উড়তে থাকে সব সময়। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
এলাকার বাসিন্দারা আরও বলেন, প্রতিটি এলাকাতেই মশার উপদ্রব আছে। যত্রতত্র আবর্জনাও ফেলা হয়। মহল্লে আবদুল্লাহ এলাকায় নর্দমা প্রশস্তকরণ শেষ হলেও ভাঙাচোরা রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়নি। কাজীদিঘিতে জমে আছে শেওলা ও কচুরিপানা। শাহী ঈদগাহের ঠিক পাশেই জনবহুল কাজীটুলা উঁচাসড়ক এলাকার মূল সড়কের পাশেই আবর্জনা রাখার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্মিত ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন’ থাকায় সব সময় উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। ইনছান শাহ গলি ও কাহের মিয়া এলাকার সরু গলিতে যানবাহন ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না।
মক্তব গলি এলাকার বাসিন্দা নসু মিয়া (৬০) বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সকাল ও সন্ধ্যায় সামান্য সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে এলাকায় সুপেয় পানির সংকট আছে।
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ বলেন, ‘আমি নিজেকে সফল মনে করি। প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে ৫ থেকে ৬টি টিলা থাকায় ঝোপঝাড় বেশি। তাই মশার উৎপাত কিছুটা বেশি। তবে সুপেয় পানির কোনো সমস্যা ওয়ার্ডে নেই। বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে পানি সরবরাহের সময়ে একটু এদিক-সেদিক হয়। লোহারপাড়া এলাকায় একটি নতুন পানির পাম্প পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচ থেকে সাত দিন আগে চালু হয়েছে। এতে ওই এলাকায় পানির সমস্যা আর থাকবে না। এলাকার সরু গলি প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। খুঁড়ে রাখা সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। আর সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনটি স্থানান্তর করে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
ভঙ্গুর পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থা
কাজী জালাল উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশ ঘেঁষে সিটি করপোরেশনের ভাগাড় আছে। এতে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়ায়। সম্প্রতি নগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঝরনারপাড় এলাকায় সরেজমিনে গেলে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ ওয়ার্ডের অন্য এলাকাগুলো হচ্ছে এভারগ্রিন, ঝেরঝেরি পাড়া, কুমারপাড়া, মিরাবাজার, মৌসুমী, সবুজবাগ, শাহী ঈদগাহ, সোনাতুলা, ভাইয়ারপাড়া ও শাঁখারী পাড়া।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রতিটি এলাকাতেই মশার উপদ্রব থাকলেও ওষুধ ছিটানো হয় খুব কম। নিয়মিত নালা-নর্দমাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় স্থানীয় ব্যক্তিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সোনাতুলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কবীর আহমদ (৪০) জানান, এলাকার কিছু নিচু অংশে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এলাকায় সড়কের পাশে সরু একটা নালা থাকলেও তা কাজে আসছে না। কারণ, সে নালা ভরাট হয়ে গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ঝরনারপাড় এলাকার কয়েকটি সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে পানির পাইপ বসানো হয়েছে। কয়েক মাস আগে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হলেও সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। একই অবস্থা আগপাড়া এলাকারও। এভারগ্রিন, মৌসুমী, ভাইয়ারপাড়া ও ঝেরঝেরিপাড়া এলাকার পাড়া-মহল্লায় প্রচুরসংখ্যক সরু গলি আছে। এসব এলাকা দিয়ে সহজে যানবাহন চলাচল করতে পারে না।
ঝরনারপাড় এলাকার এক গৃহিণী বলেন, মশার উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। দিনরাত সমানতালে মশা কামড়ায়। কয়েল জ্বালিয়েও নিস্তার পাওয়া যায় না। অনেকে দিনের বেলাও মশারি টাঙিয়ে থাকেন। অথচ মশকনিধনে নিয়মিত সিটি কর্তৃপক্ষকে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না। এলাকার নালা-নর্দমাগুলোও পরিষ্কার করা হয় না।
ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে ভোটারদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেসব হিসাব করলে নিজেকে ৮৫ ভাগ সফল বলবেন। তিন মেয়াদে কাউন্সিলর হওয়ায় অনেক সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন। সোনাতুলা ও ঝেরঝেরিপাড়ার জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন। ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সরু গলি এখন প্রশস্ত। যেসব বাকি আছে, আগামী মেয়াদে নির্বাচিত হলে সেগুলোর কাজও শেষ করবেন। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক করার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এলাকায় মশার উপদ্রব কিছুটা আছে। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে তিনি সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন।