রিয়াদের নীরব বিদায়

0
139
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

আয়ারল্যান্ড সিরিজে বাদ পড়ার মধ্য দিয়েই বিদায় রাগিনীর সুর শুনতে পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একপ্রকার অনানুষ্ঠানিক বিদায় বলে দিয়েছে বিসিবি। এ কয়দিনে জাতীয় দলে তাঁর জায়গা চলে গেছে অন্যের দখলে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছেন রিয়াদ নিজেও। তাই জাতীয় দল পর্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার। এই যেমন আগামী জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় হোম সিরিজের জন্য দল নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতরেও থাকছেন না। তামিম ইকবালরা যখন দেশে খেলবেন, রিয়াদ তখন সৌদি আরবে হজ পালন করবেন। বিসিবির চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার হওয়ায় ছুটি নিতে হচ্ছে তাঁকে। এটুকু আনুষ্ঠানিকতা না থাকলে বোর্ডের সঙ্গে সব দায় হয়তো চুকে যেত তাঁর। সেদিক থেকে বলা যায় ভারত বিশ্বকাপে খেলা হচ্ছে না রিয়াদের।

কাগজে কলেমে মাহমুদউল্লাহর বয়স ৩৭ বছর। বেসরকারিভাবে সেটা আরও বেশি হবে বলে মনে করা হয়। শারীরিক ক্ষিপ্রতা কমে যাওয়ায় এ অনুমান আরও জোরালো করে। এই বয়সী কোনো ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে রাখতে চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট।  মূলত রাসেল ডমিঙ্গোর সময় থেকেই রিয়াদকে জাতীয় দল থেকে একটু একটু করে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে টেস্ট দলে ফিরে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েতে গার্ড অব অনার নেন সতীর্থদের কাছ থেকে। যেটাকে ভালোভাবে নেননি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। লাল বলের খেলা ছেড়ে দিয়ে সাদা বলের ক্রিকেট নিয়ে ছিলেন তিনি। টি২০ বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ে বুঝে যান সীমিত হয়ে এসেছে তাঁর সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। শুধু ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে জাতীয় দলে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করে গেছেন গত কিছুদিন।

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে রিয়াদকে পরখ করে দেখেন। তাঁর ব্যাটিং নিয়ে কোচের অভিযোগ না থাকলেও আপত্তি ফিল্ডিং নিয়ে। যেটা কিনা কোচের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবার। তাই বিশ্রামের অন্তরালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ থেকে বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। আশা করেছিলেন আইরিশদের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজের দলে রাখা হবে তাঁকে। বিসিবি দল ঘোষণার পর ভুল ভাঙে তাঁর। তিনি বুঝে যান জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর। মিছেমিছি বিশ্বকাপ খেলার ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকতে চাননি আর। জাতীয় দল নির্বাচক, কোচিং স্টাফ এবং বিসিবি কর্মকর্তাদের বিব্রতকর প্রশ্নের মুখে পড়া থেকে মুক্তি দিতেই কিনা হজ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সিনিয়র এ ক্রিকেটার। রিয়াদ বৃহস্পতিবার সমকালকে নিশ্চিত করেন, হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলেছেন। তবে ছুটির আবেদন জমা দিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেন, ৩০ এপ্রিল তাঁরা জানাতে পারবেন রিয়াদ ছুটি নিয়েছে কিনা।

রিয়াদ যে বিশ্বকাপ ভাবনায় নেই, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কথা থেকে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রিয়াদ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার অবশ্যই। বাংলাদেশ দলকে সে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু আমি যদি সত্যি বলি, যেহেতু ও জাতীয় দলে নেই, তাই রিয়াদকে বিশ্বকাপে দেখছি না। কারণ যদি তাকে বিশ্বকাপে দেখতাম এই সিরিজগুলোতে (আয়ারল্যান্ড) থাকত।’ যদিও কোচ চন্ডিকা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে বলেছিলেন রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়নি। বিশ্বকাপ ভাবনা থেকেও মুছে ফেলা হয়নি তাঁকে। এগুলো যে কথার কথা তা বুঝতে বাকি নেই রিয়াদের। তাই তার পরিকল্পনা এখন ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে। জাতীয় দলের ভাবনা ভুলে আরও তিন বছর খেলে যেতে চান ঢাকা লিগ আর বিপিএলে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.