যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে ভিয়েতনামের পোশাক ও জুতাশিল্প

0
205
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে ভিয়েতনাম

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উৎপাদিত পণ্য, বিশেষ করে তুলা আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে ভিয়েতনামে। দেশটির তৈরি পোশাক ও জুতাশিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। যে কারণে গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৯০ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। খবর রয়টার্সের

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, জিনজিয়াং প্রদেশে শ্রমিকদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করানো হয়। প্রদেশটি মূলত উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলমান–অধ্যুষিত। অভিযোগের ধারাবাহিকতায় জোরপূর্বক শ্রম প্রতিরোধ আইন (ইউএফএলপিএ) পাস করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে দেশটি। এতে বিপাকে পড়েছে ভিয়েতনাম। চীন অবশ্য বরাবরই দাবি করেছে যে তারা উইঘুর মুসলমানদের জিনজিয়াং প্রদেশে জোর করে আটকে রাখেনি।

ইউএফএলপিএ অনুযায়ী যেসব কোম্পানি চীনের ওই অঞ্চল থেকে পণ্য আমদানি করবে, তাদের এই মর্মে প্রত্যয়ন করতে হবে যে এসব পণ্য জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি হয়নি। মার্কিন শুল্ক বিভাগ ইতিমধ্যে সেই দেশে আমদানি হওয়া পণ্যের চালানও পরীক্ষা করতে শুরু করেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে জোরপূর্বক শ্রমে উৎপাদিত পণ্য রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বিভাগ এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০০টি চালান পরীক্ষা করেছে। এসব চালানে যেসব পণ্যের নাম রয়েছে, সেগুলোর আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক ও জুতার চালান ইউএস কাস্টমসে অপেক্ষমাণ ছিল। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ পণ্যই ভিয়েতনাম থেকে আনা। ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যের মাত্র ১৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ছাড়পত্র পেয়েছে।

ইউএফএলপি আইনের কারণে মার্কিন শুল্ক বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ছাড়পত্র দেয়নি, ভিয়েতনামের রপ্তানি করা এমন পণ্যের মূল্য ২০ লাখ ডলার ছাড়িয়েছে। সংখ্যাটি চীনের প্রায় তিন গুণ। ইউএফএলপি আইনের কারণে চলতি বছরের প্রথম মাস থেকে ছাড়পত্র না দেওয়ার হার বেড়েই চলেছে।

আইনটি বাস্তবায়নে কড়াকড়ির কারণে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড গ্যাপ, নাইকি ও অ্যাডিডাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে ক্রয়াদেশ কমিয়েছে। নাইকি ও অ্যাডিডাসের প্রতি তিন জোড়া জুতার এক জোড়া ভিয়েতনামে তৈরি হয়। এ ছাড়া নাইকি তাদের পোশাকের ২৬ শতাংশ এবং অ্যাডিডাস প্রায় ১৭ শতাংশ পোশাক দেশটি থেকে নেয়। তবে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক আমদানিকারকই এখন পর্যন্ত নির্বিকার।

ভিয়েতনামে কৃষির পরই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান শিল্প খাতে। কিন্তু ইউএফএলপিএর প্রভাবে গত অক্টোবর থেকে ৩৪ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ৩ শতাংশ চাকরি হারিয়েছেন। রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ২ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি কমেছে।

ইউনিভার্সিটি অব ডেলওয়্যারের ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক শেং লু রয়টার্সকে বলেন, ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত চীনা তুলা আমদানির ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। আর চীনের ৯০ শতাংশ তুলাই হয় জিনজিয়াং প্রদেশে। তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামের পক্ষে চীনের তুলার ওপর নির্ভরশীলতা কমানো খুবই কঠিন। কারণ, ভিয়েতনামে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ চীনা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক ও জুতা রপ্তানি করেছে। দ্রুত বিকল্প উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পারলে দেশটির সংকট আরও খারাপের দিকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.