সাতক্ষীরায় ১২ দিনে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ৫৭ হাজার কেজি আম ধ্বংস

0
134
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে নষ্ট করা হয় রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ১৮ হাজার ৮০০ কেজি আম

সাতক্ষীরায় অধিক লাভের আশায় রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার সময় ৫৬ হাজর ৮৪০ কেজি আম জব্দ করার পর নষ্ট করা হয়েছে। গত ১২ দিনে জেলার ছয় উপজেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ অভিযান চালিয়ে এসব আম জব্দের পর নষ্ট করে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, ১৬ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ দিনে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ৫৬ হাজার ৮৪০ কেজি আম বাজারজাত করার সময় নষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৪০ কেজি, কলারোয়ায় ১ হাজার কেজি, দেবহাটায় ২৮ হাজার কেজি, কালীগঞ্জে ১০ হাজার কেজি, আশাশুনিতে ২ হাজার কেজি ও শ্যামনগরে ২ হাজার কেজি।

১৬ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ বিষয়ে একটি সভা হয়। এতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং আমচাষিরা অংশ নেন।

সভায় বাগান থেকে আম সংগ্রহের জন্য দিন নির্ধারণ করে তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১২ মে থেকে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোলামখাস, বৈশাখীসহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের আম; ২৫ মে থেকে হিমসাগর, ক্ষীরশাপাতি; ১ জুন থেকে ল্যাংড়া; ১৫ জুন থেকে আম্রপালি আম সংগ্রহের দিন ঠিক করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্ধারিত তারিখের আগে কেউ গাছ থেকে আম সংগ্রহ করলে ও রাসায়নিক দিয়ে সেই আম পাকিয়ে বাজারজাত করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কারও গাছের আম আগে পাকলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তার সম্মতি নিয়ে ওই গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ এপ্রিল—৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসজুড়েই জেলায় প্রচণ্ড গরম ছিল। এ ছাড়া জেলায় ৩১ মার্চের পর বৃষ্টি হয়েছে গতকাল শুক্রবার।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল আলম বলেন, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওপরে তাপমাত্রা উঠলে ও অনাবৃষ্টির কারণে আম আগে পাকতে পারে। তবে ২৭ এপ্রিল বৃষ্টি হওয়ায় আমের জন্য উপকার হয়েছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার আমের সুখ্যাতি রয়েছে বিদেশেও। জেলায় ১৬ জাতের আমসহ স্থানীয় একাধিক জাতের আম চাষ করা হয়। সাতক্ষীরায় আমচাষির সংখ্যা ১৩ হাজার ১০০। চলতি মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলার ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

চাষিরা নন, ব্যবসায়ীরা আমে রাসায়নিক দেন দাবি করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৬টি উপজেলার অন্তত ১২ জন আমচাষি বলেন, বর্তমানে তাঁরা বাগান থেকে প্রতি মণ গোবিন্দভোগ আম ২ হাজার ৮০০ কেজি দরে বিক্রি করছেন। কিন্তু ১৫ দিন পর যখন একসঙ্গে বাগান থেকে আম সংগ্রহ শুরু হবে, তখন এ দাম কমে ১ হাজার ৬০০-২ হাজার টাকা হবে।

তালার খলিশখালী গ্রামের আমচাষি আল আমিন এবং কলারোয়ার কেরালকাতা গ্রামের আমচাষি মিলন রহমান, কবিরুল ইসলাম ও নূর হোসেন বলেন, প্রচণ্ড গরমে আম পেকে ঝরে যাচ্ছে। তাই তাঁরা গাছ থেকে আম পাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। মে মাসে সাধারণত ঝড়-বৃষ্টি হয়। ঝড়ে আম পড়লে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে অনেক চাষি বাগান থেকে আগেভাগে আম সংগ্রহ করছেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, ২০২২ সালে গাছ থেকে আম সংগ্রহের দিন নির্ধারণ করা হয় ৫ মে থেকে। এবার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ মে থেকে। গত তিন-চার বছরের অবস্থা পর্যালোচনা করে ও চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, ১২ মের আগে সাধারণত আম পাকে না। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে আম আগে পাকলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও ইউএনওর সম্পত্তি নিয়ে তা সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে।

অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় বিপুল পরিমাণ অপরিপক্ব আম পেড়ে রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাতকরণে চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, মানুষ সচেতন না হলে এসব বন্ধ করা কঠিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.