মঙ্গোলিয়ার পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বোয়িং–৭৮৭ (ড্রিমলাইনার নামে পরিচিত) উড়োজাহাজের মাধ্যমে দেশটির ১২ জন পাইলটকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রথম পর্যায়ে আজ শুক্রবার তিন পাইলটকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থী পাইলটরা মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইনসে কর্মরত।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম। এ সময় বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদেশি পাইলটরা ‘লাইন ট্রেনিং’ প্রশিক্ষণ নেবেন। এর মাধ্যমে হাতে-কলমে বোয়িং–৭৮৭ উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ পাবেন তাঁরা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে এখন ২১টি উড়োজাহাজ আছে। এর মধ্যে ছয়টি বোয়িং–৭৮৭ (ড্রিমলাইনার)। এ ধরনের উড়োজাহাজ মঙ্গোলিয়ায় নেই। তবে শিগগিরই দেশটির বহরে দুটি বোয়িং-৭৮৯ যুক্ত হবে বলে বিমান সূত্র জানায়।
নিয়ম অনুযায়ী বোয়িং–৭৮৭ বা ৭৮৯ চালানোর আগে হাতে-কলমে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ জন্য মঙ্গোলিয়ার পক্ষ থেকে বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর দেশটির ১২ পাইলটকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিমান।
বিমান বাংলাদেশের হয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন, এমন পাইলটদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১২ পাইলট কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য তিনজন এসেছেন। ২৪ এপ্রিল তাঁরা ঢাকায় আসেন। এরপর তিন দিনের ‘গ্রাউন্ড ট্রেনিং’ নেন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে আজ ওই তিনজনের একজন ঢাকা-সিলেট-লন্ডন রুটের একটি ফ্লাইটে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছেন। ফ্লাইটটি পরিচালনা করছেন ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুল হক।
ওই প্রশিক্ষক আরও বলেন, মঙ্গোলিয়া থেকে আসা তিন পাইলট এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে ‘সিমুলেটর ট্রেনিং’ নিয়েছেন। এখন তাঁদের মোট ১৬টি ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রত্যেকের প্রশিক্ষণ শেষ হতে এক মাসের মতো লাগবে।
প্রথম ব্যাচে আসা তিন পাইলট হলেন, মুনগুনতুলগা ওয়ুনবোল্ড, আমরসানা বাইম্বাসুর ও মুনখোচির গোতভ। অন্য ৯ জনের নাম এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রশিক্ষণার্থী পাইলটদের বোয়িং–৭৩৭ ও ৭৬৭ চালানোর অভিজ্ঞতা আছে।
বিমান সূত্র জানিয়েছে, প্রশিক্ষণের সব খরচ বহন করছে মঙ্গোলিয়া সরকার। এ ছাড়া একজন পাইলটকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রায় ১৬ হাজার ডলার পাবে। এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে তিন পাইলট তাঁদের দেশের পক্ষ থেকে অর্ডার দিয়ে রাখা দুটি ড্রিমলাইনার বুঝে নেবেন।
বিমানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বিদেশি পাইলটদের এমন প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম বিমানে এই প্রথম। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার এভিয়েশন খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে এবং সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে বিমানই প্রথম বিদেশি পাইলটদের ড্রিমলাইনারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার গৌরব অর্জন করছে।
এ বিষয়ে বিমানের এমডি শফিউল আজিম বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রশংসনীয় ফ্লাইট সেফটি স্ট্যান্ডার্ডের কারণে বিমানের প্রতি বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর আস্থা অর্জিত হয়েছে। বিমানের সেফটি স্ট্যান্ডার্ড ও মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের সক্ষমতার কারণে বিদেশি এয়ারলাইনসের বিমানের দেওয়া প্রশিক্ষণের প্রতিও আকর্ষণ বাড়ছে। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণের পরিধি আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।