লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছিল চীন। দেশটি ইউয়ানকে ডলারের বিকল্প আন্তর্জাতিক মুদ্রা করতে চাইছে। এ প্রচেষ্টায় সম্প্রতি কিছুটা সফলতা পেয়েছে চীন।
গত মার্চের সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, আন্তসীমান্ত (ক্রস-বর্ডার) লেনদেনে প্রথমবারের মতো ডলারের পরিবর্তে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহার করছে চীন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জের তথ্য বিশ্লেষণ করে রয়টার্স জানিয়েছে, মার্চে রেকর্ড ৫৪ হাজার ৯৯০ কোটি (৫৪৯.৯ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ আন্তসীমান্ত লেনদেন ও অর্থপ্রাপ্তি কার্যক্রম ইউয়ানের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে চীন। ফেব্রুয়ারি মাসে ইউয়ানের মাধ্যমে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি (৪৩৪.৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের সমান।
এ হিসাবে মার্চে চীনের সব আন্তসীমান্ত লেনদেনের ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশের ক্ষেত্রে ইউয়ান ব্যবহার করা হয়েছে। আর ডলারের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ আন্তসীমান্ত লেনদেন ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল।
আন্তসীমান্ত লেনদেনের পরিমাণ গণনার ক্ষেত্র চলতি ও মূলধনি উভয় ধরনের হিসাবকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
ইউয়ানকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহার করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে চীন। এ জন্য দেশটি আন্তসীমান্ত বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য ইউয়ানের ব্যবহার বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায় দেশটি।
বৈশ্বিক বাণিজ্যে অবশ্য এখনো ইউয়ানের ব্যবহার অনেক কম, তবে এর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।
আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফটের তথ্যে দেখা গেছে, মার্চ মাসে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যত লেনদেন হয়েছে, তাতে ইউয়ানের ব্যবহার বেড়ে সাড়ে ৪ শতাংশ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডলারের হিস্যা ছিল ৮৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এদিকে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আন্তর্জাতিক লেনদেনে নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে চায় আরেক বড় অর্থনীতির দেশ রাশিয়া। তবে বর্তমানে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রুশ মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে লেনদেনে পশ্চিমা দেশগুলোর নানা বিধিনিষেধ রয়েছে।
এ কারণে বিকল্প মুদ্রা হিসেবে রাশিয়াও চীনের মুদ্রা ইউয়ানকে উল্লেখযোগ্য হারে ব্যবহার করছে। এটিও ইউয়ানের বৈশ্বিক লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।