ঈদের পর বিএনপির ভাবনায় ভিন্ন ধরনের কর্মসূচি

0
200
ফাইল ছবি

এবার পুরো রোজার মাসেই নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিল বিএনপি। রোজার পরে নতুন কী কর্মসূচি আসবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবার ঈদের পরে নতুন যে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, তা আগের কর্মসূচিগুলোর চেয়ে আরও জোরালো ও শক্তিশালী হবে। মে মাসেই জলবায়ুসহ বিষয়ভিত্তিক সভা-সেমিনারের পাশাপাশি মাঠের কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।

২০২৩ সালের রমজান মাসটি ছিল বিএনপির জন্য একটু ব্যতিক্রম। দলটি এবার ইফতার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার মধ্যেও রাস্তার কর্মসূচিতে সরব ছিল। এর মধ্যে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উপজেলা, জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্তরে দুই ঘণ্টার ‘অবস্থান কর্মসূচি’ অন্যতম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই ঈদের পরে নতুন কর্মসূচি আসবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পছন্দ হোক বা না হোক, জনগণের স্বার্থে বিএনপি পুরো রোজার মাসেই নানা কর্মসূচি করেছে। স্বাভাবিকভাবেই ঈদের পরেও কর্মসূচি চলবে। একটা বিষয় পরিষ্কার—রাস্তার আন্দোলন ছাড়া কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার যায় না। সুতরাং রাস্তায় এর সমাধান হবে এবং প্রয়োজনীয় কর্মসূচিও দেওয়া হবে।’

বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। কখনো বিভিন্ন দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎভাবে, কখনো এককভাবে নানা কর্মসূচি করছে।

দলীয় সূত্র জানায়, সামনের কর্মসূচিগুলো হবে যুগপৎ এবং কর্মসূচি ঠিক করা হবে সমন্বিতভাবে। যাতে ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর আন্দোলন গড়তে জনমনে একটা আস্থার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আগামী মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠেয় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কথাও বিবেচনায় আনা হবে। পাঁচ সিটির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।

আবার এ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণাও দেবে না। তবে নগরভিত্তিক কর্মসূচি বাড়িয়ে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সক্রিয় আন্দোলনে যুক্ত করার প্রয়াস নেওয়া হবে। সে কর্মসূচি কী ধরনের হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা কথা বলতে চান না।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই মুহূর্তে ‘পুরো দেশ ক্ষুব্ধ’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ মিছিল নিয়ে নামল কি না, সেটি অন্য বিষয়। সরকার দুর্বল অবস্থায় আছে। কিন্তু আমরা ধাক্কা দিয়ে ফেলতে পারিনি—এটাই তার সবলতা। এই সরকার একটা বিষধর সাপ। কিন্তু এখন ছোবল দিতে পারবে না, ফুঁস করতে পারবে। ভয় না পেলে এই সাপ মরবেই।’

‘ব্যতিক্রম কিছু কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে’

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সামনে মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি কম থাকবে। বেশির ভাগ কর্মসূচি হবে মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। দলটির নেতারা জানান, এবার তাঁরা নানা আঙ্গিকে মাঠপর্যায়ে অনেক কর্মসূচি করেছেন। সর্বশেষ ১০ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১ সপ্তাহ সব বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি অথবা মানববন্ধন ও প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি হয়।

তার আগে ৮ এপ্রিল সারা দেশের মহানগর, সব থানা ও উপজেলায় দুই ঘণ্টার ‘অবস্থান কর্মসূচি’ করে। হিসাবে ওই দিন ১৩টি মহানগরের ১২৮টি থানায় এবং ৫৫০টি উপজেলা মিলে প্রায় ৬৫০টি স্থানে একযোগে এই কর্মসূচি হয়। এর আগে সব মহানগর ও জেলা সদরে এই অবস্থান কর্মসূচি হয়েছিল।

এ ছাড়া রমজানে মাঠের অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি ছিল ইফতার মাহফিল ও দোয়ার অনুষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, এবার ইফতার অনুষ্ঠানকেও তাঁরা আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর কৌশল হিসেবে নিয়েছেন। তাই এবার কেন্দ্রীয় থেকে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অসংখ্য ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরেই প্রায় ৬০টির মতো আনুষ্ঠানিক ইফতার অনুষ্ঠান হয়।

যদিও পুলিশের বাধা ও হামলায় অনেক জায়গায় পূর্বঘোষিত ইফতার অনুষ্ঠান হতে পারেনি। তবু সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমর্থকদের উপস্থিতিতে দলের নীতিনির্ধারকেরা সন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করছেন, সামনের কর্মসূচিগুলোয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ শুক্রবার বলেন, ‘রমজানের পরের কর্মসূচি আমরা এখনো নির্ধারণ করিনি। আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সবার সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঠিক করা হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, এবারের কর্মসূচি ও আন্দোলন অনেক জোরদার এবং বেগবান হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.