শুদ্ধি অভিযান চলবে বাফুফেতে

0
165
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের লোগো।

বাফুফের অনিয়ম ও দুর্নীতির যে ৫১ পৃষ্ঠার ফিরিস্তি দিয়েছে ফিফা, তা পড়ে শনিবার রাতে নাকি ঘুমাতে পারেননি কাজী সালাউদ্দিন। দরপত্র আহ্বান, ফিফা ফান্ডের অপব্যবহার, ক্লাবগুলোর অনুদান নিয়ে নয়ছয়ে শুধু যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ দায়ী, তা কিন্তু নয়। এর সঙ্গে জড়িত ফুটবল ফেডারেশনের ক্রয়-সংক্রান্ত এবং ফিন্যান্স বিভাগ।

এ জন্য রোববার বিকেলে সভাপতি সালাউদ্দিন এসব বিভাগে কর্মরত স্টাফদের নিজের রুমে তলব করেছিলেন। একে একে সবার কাছে এ অনিয়মের কৈফিয়ত চেয়েছিলেন। হিসাব শাখার দায়িত্বশীলদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন। সেদিন বিকেলে তাঁর সঙ্গে থাকা সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক তো বাফুফের স্টাফদের ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন।

ফেডারেশনের দুই ক্ষমতাধর ব্যক্তির কঠোর মনোভাবে সেদিন থেকেই চাকরি হারানোর আতঙ্ক কাজ করছে বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত স্টাফদের মনে। দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ সোহাগের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তা বের করতে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক মাসে বাফুফের স্টাফদের মুখোমুখি হতে হবে তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে।

তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরই টালমাটাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে ফুটবল ফেডারেশনের অভ্যন্তরে। বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বাফুফেতে ব্যাপক কাটছাঁট হবে। সেটা যে কর্মীদের, তা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন তিনি। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রশাসনিক নানা অনিয়ম উঠে আসার সম্ভাবনা আছে। তাই সোহাগকাণ্ডের পর নতুন করে সাজানো হবে পুরো বাফুফেকে। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে নতুন কিছু স্টাফ নিয়োগের পরিকল্পনাও নিয়ে নিয়েছেন সভাপতি। তদন্তের পরই বাফুফেতে বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান হবে বলে জানিয়েছেন ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ফিফার দেওয়া টাকা ঠিকমতো ব্যয় না করা এবং অনিয়মের জন্য বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে বাফুফের চার কর্মকর্তা চিঠি পেয়েছিলেন। নিষিদ্ধ সোহাগের বাইরে ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন এবং ফিন্যান্স এক্সিকিউটিভ অনুপম সরকার। সব অনিয়মের মূলে এই কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

যদিও বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ফিন্যান্স কমিটির কোনো দায় দেখছেন না। পদাধিকার বলে সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় সোহাগ সব ফাইলে সই করেছেন। তাই কোপটা তাঁর ওপর দিয়েই গেছে। কিন্তু আবু হোসেন এবং অনুপম সরকারও যে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারেন, তার শঙ্কাও করছে বাফুফে নির্বাহী কমিটি।

ক্রীড়াসামগ্রী ক্রয়, ফুটবল ক্রয়, বিমানের টিকিট ক্রয় এবং ঘাস কাটার মেশিন ক্রয়ে ফিফা যে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছে তাতে বাফুফে সভাপতি সব দায় দিয়েছেন ফিন্যান্স বিভাগের কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে চিফ ফিন্যান্স অফিসার আবু হোসেনকে ডেকে অনেক কথা শুনিয়েছেন সালাউদ্দিন। ‘বসে বসে বেতন নিচ্ছেন’– এমন কথাও নাকি তাঁকে বলেছিলেন বাফুফে সভাপতি। কীভাবে তাঁর হাতের ওপর দিয়ে এসব গেল, কেন তাঁর চোখে এসব অনিয়ম পড়ল না– এসব জানতে চেয়েছিলেন। সেই সময় নাকি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আবু হোসেন বলেছিলেন, সবই তিনি দেখেছেন।

বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, কাজে একেবারেই সিরিয়াস ছিলেন না আবু হোসেন। কোনো ফাইল গেলে সেটা তিন-চার দিনও পড়ে থাকত তাঁর রুমে। এরপর কার্যত চোখ বন্ধ রেখেই সব ফাইলে সই করতেন তিনি! আবু হোসেনের সঙ্গে বাফুফের অর্থ শাখার অনুপম সরকারও এই ঘটনার জন্য দায়ী বলে জানিয়েছেন বাফুফের এই সূত্র। আবু হোসেনের মতো তিনিও ফিফার নজরে আছেন। ওপর থেকে কথা না বলার চাপ আছে বলে এসব অভিযোগ নিয়ে মুখে কুলুপ বাফুফের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের। যেহেতু তদন্ত কমিটি হয়েছে, তাই যা বলার তা ওই কমিটির কাছেই বলবেন তাঁরা। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, অর্থ বিভাগের এই দুই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।

একই সঙ্গে সোহাগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাফুফের গ্রাসরুট ম্যানেজার হাসান মাহমুদ এবং কম্পিটিশন ম্যানেজার জাবের বিন আনসারীকেও সন্দেহ করছেন অনেকে। তাঁদের অনিয়ম নিয়ে কথা উঠলেও এখনও হাসান-জাবেরের বিপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ফিফা। এখন বাফুফের তদন্ত কমিটি কী রিপোর্ট দেয়, সেটাই দেখার অপেক্ষায় সবাই। সব মিলিয়ে বাফুফেতে এখন বিরাজ করছে নানা আতঙ্ক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.