বিশ্বে রেকর্ড তাপমাত্রার শঙ্কা, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

0
123

বিশ্বে ২০২৩ অথবা ২০২৪ সালে গড় তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পূর্বানুমান অনুযায়ী ‘এল নিনো’ ফিরে এলে এমনটি হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এল নিনোর মাধ্যমে বাড়তি উষ্ণতার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এসব দেশে দেখা দিতে পারে মারাত্মক তাপপ্রবাহ, খরা ও দাবানলের মতো দুর্যোগ। সেই হিসেবে এল নিনোর ফিরে আসা বাংলাদেশের জন্যও হুমকির। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ। এ ছাড়া সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহে সারাদেশই ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।
এল নিনো ও লা নিনা স্প্যানিশ শব্দ। এদের অর্থ যথাক্রমে– বালক ও বালিকা। কয়েকশ বছর ধরে এই শব্দ দুটি দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলের জলবায়ুগত অবস্থা বা চক্রকে বোঝানো হয়। লা নিনার সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় এবং এটি ঘূর্ণিঝড়কে প্রভাবিত করে। আর এল নিনো অনেকটা তাপপ্রবাহ, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
জলবায়ু-সংক্রান্ত মডেলগুলোর বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরে তিন বছর ধরে ‘লা নিনা’ ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করছিল। এই আবহাওয়ায় সাধারণত বৈশ্বিক তাপমাত্রা সামান্য কমে। চলতি বছরের শেষ দিকে লা নিনার বিপরীত ধরন এল নিনো ফিরতে পারে, যার মধ্য দিয়ে বাড়তে পারে বৈশ্বিক তাপমাত্রা।
এল নিনো চলাকালে নিরক্ষরেখা বরাবর পশ্চিমমুখী বায়ুপ্রবাহ ধীর হয়ে যায় এবং পানির উষ্ণ স্রোতগুলোর পূর্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের পরিচালক কার্লো বুনতেম্পো বলেন, এল নিনো সাধারণত বৈশ্বিক পর্যায়ে রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে এটি ২০২৩ নাকি ২০২৪ সালে ঘটবে, তা এখনও জানা যায়নি। কিন্তু আমি মনে করি, এটি ঘটার আশঙ্কাই বেশি। উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালের শেষ দিকে এল নিনো ফিরে আসতে পারে এবং বছরের শেষ দিকে এটি শক্তিশালী হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
রেকর্ড অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর ছিল ২০১৬ সাল। ওই সময়ও শক্তিশালী এল নিনো সক্রিয় ছিল। তবে এল নিনো ছাড়াও অন্য বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ তাপমাত্রা দেখা যায়। গত আট বছর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম। এটি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে সৃষ্ট  দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণায়ন প্রবণতার প্রতিফলন।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গ্রান্থাম ইনস্টিটিউটের সিনিয়র লেকচারার ফ্রেডেরিক অটো বলেন, মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অব্যাহত রাখায় বিশ্ব আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। এল নিনো শুরু হলে ২০১৬ চেয়েও ২০২৩ সাল বেশি উষ্ণ হয়ে উঠতে পারে।
সমুদ্রবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে লা নিনা ও এল নিনোর প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এদের প্রভাবের গবেষণা আরও সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জলবাযু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ। সুতরাং এ মহাসাগরের পরিবর্তনে পুরো পৃথিবীরই পরিবর্তন ঘটে। আর ভূপৃষ্ঠ থেকে জলভাগে পরিবর্তনে জলবায়ুর পরিবর্তন বেশি হয়। নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখার ওপাশ থেকে নেমে আসা উষ্ণ পানির স্রোতের কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর প্রভাবকে ইকুয়েডর ও পেরুর জেলেরা ‘এল নিনো’ বলেন। ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে ইকুয়েডর ও পেরুর উপকূলের দিকে বিষুবরেখার অন্যদিক থেকে উষ্ণ পানির স্রোত আসতে শুরু করে। ফলে সাগরের পানির উষ্ণতা বাড়ে এবং ঝড়, খরা ও অনাবৃষ্টি দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত দু-এক বছর পরপর এল নিনো দেখা দেয়। এর প্রভাবে তুষার ঝড়, দাবানল এবং খরা হয়। এটি ফিরলে বাংলাদেশেও প্রভাব পড়বে। এই মুহূর্তে আমাদের বড় কর্তব্য, দুর্যোগের প্রতি বিশ্বের নজর আকৃষ্ট করতে পদক্ষেপ নেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতি মোকাবিলায় গঠিত জাতিসংঘের অভিযোজন তহবিল থেকে অর্থ আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (সিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান বলেন, শিল্পায়নের ফলে গত ১০-১৫ বছরে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। সবাইকে এখনই সচেতন হতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যই পৃথিবীর তাপমাত্রা যাতে না বাড়ে, সে উদ্যোগ নিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.