গণপরিবহন খাতের মানোন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী উদ্যোগ (স্টার্টআপ) ‘যাত্রী’ এ পর্যন্ত সাড়ে ৫২ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসবিকে টেকের নেতৃত্বে আলসা, জেনটিং ভেঞ্চারস, ডিভিসি, দোহা টেক অ্যাঞ্জেলস যাত্রীতে বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়াও বর্তমান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রিফ্লেক্ট ভেঞ্চারস, ব্রেন টু ফ্রি ভেঞ্চারস, টকামসেফ ক্যাপিটাল ও সবর ক্যাপিটাল এই রাউন্ডে বিনিয়োগ করেছে। গতকাল শনিবার যাত্রীর প্রধান নির্বাহী আজিজ আরমান মুঠোফোনে এসব তথ্য জানান।
আজিজ আরমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যাত্রী সাড়ে ৫২ লাখ ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় যাত্রী দেশের সব জেলা শহর ও শহরতলীতে কার্যক্রম বাড়াবে। পাশাপাশি পরিবহন প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহক পর্যায়ে কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের গণপরিবহন খাত খুব একটা সুশৃঙ্খল, প্রযুক্তিবান্ধব ও উন্নত নয়। বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের বাহন হলো বাস। বাসে অতিরিক্তি ভিড় ও অনিয়ন্ত্রিত ভাড়া নিয়ে যাতায়াতকারীদের যেমন ভোগান্তি রয়েছে, অন্যদিকে বাস মালিক ও অপারেটররা ভাড়া গ্রহণ ও বাস পরিচালনায় তার কর্মীদের অসহযোগিতা ও অসদাচরণের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে। এসব ভোগান্তি নিরসন ও এই খাতকে প্রযুক্তিবান্ধব করে তোলার লক্ষ্যেই কাজ করছে যাত্রী।
যাত্রীর কেন্দ্রীয় ডিজিটাল ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে বাস মালিক ও অপারেটরদের একটি নেটওয়ার্কের আওতায় এনে প্রতিটি বাসকে এর সঙ্গে যুক্ত করে প্রতিদিনের যাবতীয় কাজের তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। পাশাপাশি নিশ্চিত করা হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বাস পরিচালনা করা, যার ফলে যাত্রীরাও সঠিক ভাড়ায় ঝামেলা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারছেন। যাত্রী এখন গণপরিবহনে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, যার মাধ্যমে প্রচলিত নগদ লেনদেন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
যাত্রীতে প্রধান বিনিয়োগকারী এসবিকে টেকের ব্যবস্থাপনা অংশীদার সোনিয়া বশির কবির বলেন, ‘আমরা যাত্রী’র মতো স্টার্টআপে বিনিয়োগ করতে সব সময়ই আগ্রহী, যারা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে কাজ করে। গণপরিবহন একটি বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার খাত, যার বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকার বেশি। এই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে এলে, তা সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। যাত্রীর এ ধরনের কার্যক্রম সাধারণ মানুষের গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা অনায়াসেই সমাধান করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’
সম্প্রতি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ঢাকা শহরে ৫ হাজার ৬৫০টি বাসে ই-টিকেটিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যাত্রীকে অংশীদার করেছে। ফলে যেসব বাস অপারেটর এই পরিষেবার আওতায় নেই, তারাও এটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে যাত্রী সূত্রে জানা যায়। বাস পরিচালনার প্রতিদিনের কার্যক্রমের হিসাব রাখার যে প্রচলিত ব্যবস্থা তার বদলে যাত্রীর দেওয়া নতুন ব্যবস্থাপনায় এ বাসপ্রতি দৈনিক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টিকিট বিক্রি বেড়েছে। পাশাপাশি বাস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাজের তদারকি বেড়েছে। যাত্রীর মাধ্যমে পুরো দেশে এরই মধ্যে ১০ কোটির বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
যাত্রীর এই লক্ষ্য ও কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে আজিজ আরমানের সঙ্গে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছেন জিয়া উদ্দিন ও খন্দকার তাসওয়ার জাহিন।